Views Bangladesh Logo

নেপালে ফেসবুক-ইউটিউবসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধে ডিজিটাল অধিকারকর্মীদের নিন্দা

নেপাল সরকার হঠাৎ করে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার), হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ মোট ২৬টি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করেছে। ২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তকে একনায়কতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে বিভিন্ন নাগরিক সমাজ ও ডিজিটাল অধিকারকর্মীরা।

নেপালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশটির টেলিকমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুযায়ী নিবন্ধিত নয় এমন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, এক্স, লিঙ্কডইন, ডিসকর্ড, রেডডিট, স্ন্যাপচ্যাট, সিগনাল, থ্রেডস, উইচ্যাট, কোরা, টাম্বলার, ক্লাবহাউস, মাস্টডন, ভিকে, আইএমও, জালো ও হাম্রো পাত্রোতে প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে গেছে।

ডিজিটাল অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার ও নাগরিক পরিসর সীমিত করার এক ভয়াবহ প্রচেষ্টা। তাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশিকায় “অশ্লীল”, “বীভৎস” বা “জাতীয় অখণ্ডতা ও স্বার্থবিরোধী” কনটেন্টের সংজ্ঞা অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। নিবন্ধন করলে এসব শর্ত মানতে প্ল্যাটফর্মগুলো বাধ্য হবে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করবে কারণ তারা অনেক সময় ছদ্মনাম বা বেনামী অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে রাজনৈতিক মতামত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষা করেন।

এছাড়া নেপাল সরকার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিল পাসের উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে “ভ্রান্তিকর তথ্য” বা “অশোভন কনটেন্ট” শেয়ার করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ রুপি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, এই আইন সংশোধন ছাড়া পাস হলে ডিজিটাল স্পেস নজরদারি ও দমনের আওতায় চলে যাবে।

ডিজিটাল অধিকারকর্মীরা সতর্ক করেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, বরং শ্রমিক প্রবাসী পরিবার, ক্ষুদ্র ব্যবসা, আউটসোর্সিং কোম্পানি ও ফ্রিল্যান্সারদের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে, যাদের দৈনন্দিন যোগাযোগ ও আয়ের প্রধান মাধ্যম এসব প্ল্যাটফর্ম।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো নেপাল সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল নীতি প্রণয়ন করতে। একইসঙ্গে তারা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে।

নাগরিক সমাজের ভাষ্য এই পদক্ষেপ নেপালের গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং বৈশ্বিকভাবে সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ