কার্গো টার্মিনালের আগুনে ডাচ বাংলা চেম্বার অব কমার্সের উদ্বেগ
ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিবিসিসিআই) ১৮ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলেছে, এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হচ্ছে। ডিবিসিসিআই মনে করে, এই দুর্ঘটনা কেবল মানুষ বা অবকাঠামোর ক্ষতি নয়—এটি দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, সরবরাহব্যবস্থা এবং সামগ্রিক বাণিজ্যচক্রে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।
গত ১৮ অক্টোবর বিকেলে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় আগুনের সূত্রপাত হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন ব্যাপক আকার ধারণ করলে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ধোঁয়া ও তাপের কারণে পরদিন পর্যন্ত উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, এই ঘটনায় আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—যা বাংলাদেশের বাণিজ্য ও শিল্পখাতের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডিবিসিসিআই জানিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ড দেশের বাণিজ্যিক অবকাঠামোর কিছু মৌলিক দুর্বলতাকে স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে। কার্গো টার্মিনালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, দাহ্য বা রাসায়নিক পণ্যের নিরাপদ সংরক্ষণের ঘাটতি, বিপুল পরিমাণ কার্গো ব্যবস্থাপনায় সময়োচিত নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগে বিলম্ব—এসব বিষয় শিল্পমহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্যিক সংগঠনসমূহ মনে করছে, প্রস্তুতি ও তদারকিতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের অভাব ছিল।
চেম্বারের মতে, এখন সময় এসেছে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় এবং চলমান বাণিজ্যিক ক্ষতি দ্রুত পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। তারা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) ও বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছে ঘটনাটির সময়রেখা, প্রাথমিক অনুসন্ধান এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য যোগাযোগকেন্দ্র দ্রুত প্রকাশের জন্য—যাতে বিভ্রান্তি কমে ও সহায়তা প্রক্রিয়া সহজ হয়।
ডিবিসিসিআই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দ্রুত সহায়তার ওপরও জোর দিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি, অক্ষত পণ্যের ছাড়পত্র প্রদানে গতি বৃদ্ধি এবং ব্যাকলগ মোকাবিলায় প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফ্লাইট বা রুটে ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি, কার্গো ভিলেজসহ বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক স্থাপনাগুলোর অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে প্রযুক্তিগতভাবে নিরীক্ষা করে সেই প্রতিবেদন প্রকাশ ও বাস্তবায়নের সময়সূচি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে তারা।
বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প চালানপথ ও অস্থায়ী কার্গো হাব স্থাপনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া সরকার, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিল্প-বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ, বিমা দাবি ও অবকাঠামোগত ঝুঁকি-বণ্টনের প্রক্রিয়া নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে চেম্বারটি।
ডিবিসিসিআই বলেছে, এই অগ্নিকাণ্ড কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি দেশের প্রস্তুতি, সমন্বয় ও অবকাঠামোগত নিরাপত্তার প্রতি এক কঠিন সতর্কবার্তা। এখন প্রয়োজন দায়িত্বশীল পদক্ষেপ, প্রযুক্তিগত হালনাগাদ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা সরকার, সিএএবি, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার এবং সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে দ্রুত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে