কমলো চিনির আমদানি শুল্ক, প্রভাব পড়বে না বাজারে
দেশের বাজারে চিনির দামের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় পণ্যটির উপর আরোপিত কাস্টমস ডিউটি (সিডি) অর্ধেক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্ক কমায় বাজারে চিনির দামে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে এনবিআর। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এতে বাজারে কোনো দৃশ্যমান প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই।
বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা সিডি ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৬ হাজার টাকা সিডি নির্ধারিত আছে। তবে নতুন আদেশ অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা সিডি ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা সিডি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানা গেছে। এই প্রজ্ঞাপন ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে চিনির কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। যা গত এক বছরের ৪০ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট ও উচ্চ শুল্ক হারের কারণেই বেড়েছে চিনির দাম।
জানা গেছে, চিনির বাজার জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে শুল্ক কমানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় অনেক পরে। ব্যবসায়ীরা চিনির ওপর আরোপিত কাস্টমস ডিউটি সম্পূর্ণ বাতিল করা এবং ৩০ শতাংশ আরডি (রেগুলেটরি ডিউটি) কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছিলেন।
তবে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এর কিছুই বাস্তবায়ন না হওয়ায় অসন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা। সিটি গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা সিডি নির্ধারণ করা হলে সেখানে প্রতি কেজিতে আগের চেয়ে কমবে ১ টাকা ৫০ পয়সা। পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে ৩ টাকা। এতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই।
তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের ভিত্তিতেই শুল্ক হার কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই শুল্ক হার কমানোতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।
তথ্য বলছে, বর্তমানে চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, ২ শতাংশ এআইটি (অগ্রিম আয়কর), ৩০ শতাংশ আরডি (রেগুলেটরি ডিউটি) ও ৫ শতাংশ এটি (অগ্রিম কর) নির্ধারিত আছে। এছাড়া প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা সিডি (কাস্টমস ডিউটি) ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা সিডি নির্ধারিত আছে। এখান থেকে শুধুমাত্র কাস্টমস ডিউটি অর্ধেক করা হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। তবে ঠিক এক বছর আগে এর দাম ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে শতকরা ৩৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হওয়ার মানে হলো ২০২২ সালে দেশে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় করতে হতো এ বছরের সেপ্টেম্বরে সেই একই পণ্য কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১১২ টাকা ৩৭ পয়সা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে