Views Bangladesh Logo

বিকাশে বিল দিতে গিয়ে বড় বিড়ম্বনায় ডেসকোর প্রিপেইড গ্রাহকরা, অ্যাপে মিলছে না হালনাগাদ তথ্য

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশের মাধ্যমে ‍বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়ছেন ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) প্রিপেইড গ্রাহকরা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনুসন্ধান করে আরও দেখা যায়, ডেসকোর গ্রাহক সেবার জন্য যে অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে সেটা বেশীর ভাগ সময়ই অচল থাকছে। গ্রাহকের জমা টাকার পরিমাণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য মিলছে না এই অ্যাপে। গত ১৭ মে থেকে ডেসকো অ্যাপে প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকর ব্যবহার এবং জমা টাকার পরিমাণ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। আর গত ১ অক্টোবর থেকে এমএফএস সেবা বিকাশের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটারের বিল পরিশোধ করলে তা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টেও যোগ হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকরা টাকা পরিশোধ করলেও সেই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছেন না। সেই টাকা আসলে কোথায় গিয়ে জমা হচ্ছে তাও জানতে পারছেন না ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

এত বড় বিড়ম্বনার পরও ডেসকো তাদের ওয়েব সাইটে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। ডেসকোর দায়িত্বশীলরা ভিউজ বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারেরর ক্ষেত্রে এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ছেন গ্রাহকরা। বিষয়টি সমাধানে বিকাশ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের টাকার কি ব্যবস্থা হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি তারা। কেনো অ্যাপে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি ডেসকোর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, এ ধরনের সমস্যায় এমএফএস সার্ভিসের কল সেন্টারে ফোন করলে সমস্যাটি ডেসকোর বলে জানিয়ে আর কোনো ধরনের সহায়তাই করা হয় না। ফলে এ সমস্যার সমাধান কে দেবে তা নিয়ে গ্রাহকরাও রয়েছেন গোলক ধাঁধায়।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় গ্রাহকের ৯৮ শতাংশ সমস্যার সমাধান এখন অ্যাপের মাধ্যমে হয়। অথচ আমাদের দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব অ্যাপ তৈরি করছে, তার কোনোটিই সঠিকভাবে কাজ করে না। কারণ এই অ্যাপ নির্মাণে যেমন ত্রুটি থাকে তেমনি এর ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত দুর্বল। একই সঙ্গে এখন কল সেন্টারে মানুষের সহায়তার পরিবর্তে স্মার্ট আইভিআর বা এ ধরনের প্রযুক্তির লিংক থেকে গ্রাহকরা নিজেরাই নিজেদের কাঙ্খিত সেবা এবং সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন খাতের  সরকারি-বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত স্মার্ট গ্রাহক সেবা চালু করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা যে ধরনের কল সেন্টার পরিচালনা করছেন সেটা প্রকৃতপক্ষে স্মার্ট  প্রযুক্তির নয়, গ্রাহকেরও খুব একটা কাজে আসে না।

 

ভোগান্তির শেষ কোথায়?

ডেসকোতে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ১২ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে মোট প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন ৬ লাখ ৭১ হাজার ৭৮১ জন।

ডেসকোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি কমন গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপটির নাম ”DESCO Prepaid Meter users of Bangladesh”। এ ছাড়াও প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীদের ”PrePaid Meter Help Group” নামে আরো একটি কমন গ্রুপ রয়েছে। যেখানে অন্য বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকরাও প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের অভিজ্ঞাতা বিনিময় করে থাকে। দুটি গ্রুপে দেওয়া সদস্যদের স্ট্যাটাস ঘেটে দেখা যায় ডেসকোর মতোই প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা  খুব একটা ভালো নয়।

ডেসকোর প্রি-পেইডমিটার ব্যবহারকারীদের অনেকে লিখেছেন, “পহেলা অক্টোবর থেকে বিকাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা হলেও অ্যাপে টাকা যোগ হচ্ছে না। এ জন্য প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ অফিসের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসে গেলে তাদের বিকাশের মাধ্যমে বিলের টাকা না দিয়ে ডেসকোর ভেন্ডিং অফিস কিংবা অনুমোদিত এজন্টের দোকানে যেতে বলা হচ্ছে।  কিন্তু গ্রাহক ইতোমধ্যে যে টাকা বিকাশের মাধ্যমে বিল দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে এবং যার কোনো হদিসও মিলছে না, সে বিষয়ে নিজেদের করণীয় জানাতে পারছে না ডেসকো। এভাবে ‍ডেসকো এবং বিকাশ কর্তৃপক্ষের রশি টানাটানির মধ্যে পড়ে ঠিক কত গ্রাহক গত তিন দিনে কি পরিমাণ টাকা গচ্চা দিয়েছেন তারও কোনো হিসেব নেই।”

ডেসকোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী সোয়েব মাছুম ফেসবুক পেজে লিখেছেন, গত ১৭ মে থেকে তার স্মার্টফোনে ইনস্টলড করা ডেসকোর অ্যাপে কত টাকা জমা হচ্ছে তার হালনাগাদ তথ্য দেখতে পারছেন না।  অন্য কেউ একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কি-না, তা জানতে চেয়েছেন। সেখানে সাইফুল হক নামে অপর একজন ব্যবহারকারী পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, “মিটারটি হয়তো অফলাইন হয়ে গেছে। কার্ড নিয়ে তিনি ডেসকোর নিকস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।” এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ”মিটার অফলাইন হলে তারও তথ্য অনলাইনে থাকা অ্যাপ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এটাই প্রমাণ করে ডেসকোর অ্যাপটি যথেষ্ট কার্যকর কিংবা  উন্নত নয়। এ ধরনের অ্যাপ সাধারণ মানুষের মধ্যে ডিজিটাল সার্ভিস সম্পর্কে ভুল ধারণা দিচ্ছে।

গ্রাহকদের মধ্যে অনেকেই লিখেছেন, ৫০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার হলে সেই দিন ২৫ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় যোগ হয়। কয়েকজন গ্রাহক লিখেছেন তারা ৫০০ টাকা রিচার্জ করলে প্রকৃতপক্ষে যোগ হয় ১৭৫ টাকা। সেই যোগ হওয়া টাকার তথ্য অ্যাপে দেখানো হয় একদিন পর। আবার কেনো ৩২৫ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, অ্যাপে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য থাকে না। ফলে এই অ্যাপ গ্রাহকদের মাঝে বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করছে। ডেসকো প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বেশী বিল নিচ্ছে কি-না নিজেদের বিল এবং বিদ্যুৎে ব্যবহারের স্ক্রিনশট দিয়ে সে ধরনের প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ না বাড়লেও বিলের পরিমাণ প্রতি মাসেই বাড়ছে, এমন অভিযোগও করেছেন গ্রাহকরা।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এম আতিকুল ইসলাম জানান, বিকাশের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটারের বিল দেওয়া নিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তির বিষয়টি তারা ইতোমধ্যে জেনেছেন। তবে তার দাবি, ডেসকোর সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই। এটি বিকাশের সমস্যা বলে জানিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে বিকাশ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, বিকাশ ছাড়া নগদ, মাই ক্যাশ, ডিবিবিএল বা অন্য কোথাও থেকে টাকা আসতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী আইসিটি শামীম আহসান চৌধুরী অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, নিকুঞ্জ-১, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, টোলারাবাগ, পীরেরবাগ, এবং মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার গ্রাহকদের বিকাশ ব্যবহার করে বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন সমস্যা প্রায় হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা রবি এবং গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি। অনেক সময় মিটারগুলো বাড়ির এমন জায়গায় বসানো হয় সেখানে এই দুই মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল থাকে। তখনই এই সমস্যা হয়। এ ধরনের সমস্যা হলে গ্রাহক ডেসকোর হটলাইন নাম্বারে ফোন করলে বা অফিসে এলে সমাধান করে দেওয়া হয়। তবে ডেসকোর অ্যাপে কোনো হালনাগাদ তথ্য দেখা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। ‍

তিনি দাবি করেন, ডেসকোর অ্যাপে প্রতিদিন একবার করে গ্রাহকের ব্যবহার ও জমা টাকা সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করা হয়।

এ বিষয়ে গত ২ অক্টোবর বিকাশ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানার জন্য লিখিত প্রশ্ন পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।  তবে বিকাশ কর্তৃপক্ষ বক্তব্য দিলে তা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে এ প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করবে ভিউজ বাংলাদেশ।    

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ