৬ মাসে ব্যাংকে নারীকর্মী কমেছে ২ হাজার
আর্থিক খাতে নারীর জন্য অনুকূল কর্ম পরিবেশ তৈরি করুন
দেশের আর্থিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ বিগত বছরগুলোতে বেশ আশানুরূপ ছিল। এর মধ্য দিয়ে লিঙ্গসমতার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে শিক্ষিত নারীদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল; কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি দেশের আর্থিক খাতে নারীকর্মী কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি রিপোর্ট অব ব্যাংকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় মাসে নারীকর্মী কমেছে ২ হাজার। এমনিতেই অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিচারে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় এ দেশ পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে নারীকর্মী কমে যাওয়া নিশ্চিতভাবেই আশঙ্কাজনক।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি তপশিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারীকর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৬৪৯ জন। চলতি বছরের প্রথমার্ধ (জানুয়ারি-জুন) শেষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৭৮২ জনে। সেই হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে নারীকর্মী কমেছে প্রায় দুই হাজার বা প্রায় ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে দেশের ৬১টি তপশিলি ব্যাংকে নারী ও পুরুষ মিলিয়ে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি, যার মধ্যে নারীকর্মী ১৭ শতাংশ। বাকি ৮৩ শতাংশ পুরুষ কর্মী। এছাড়া গত জুন শেষে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট কর্মীর ১৭ শতাংশ ছিল নারী। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি পাঁচজন পুরুষ কর্মীর বিপরীতে নারীকর্মী প্রায় একজন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীকর্মীদের মধ্যে প্রারম্ভিক ও মধ্যবর্তী পর্যায়ে নারীদের অবস্থান বেশি। উচ্চ পদে কর্মরত নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় অনেক কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলোতে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, যাতায়াত সুবিধা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর আগের ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অবনতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে অফিস সময়ের পর নারীদের যাতায়াত সুবিধার। গত বছরের শেষ ছয় মাসে ব্যাংকগুলোতে ৫২ শতাংশ নারী এই সুবিধা পেতেন। গত ছয় মাসে তা কমে ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
ব্যাংক খাতে নারীকর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। ব্যাংক খাত এখন মূলত গ্রামীণ এলাকায় সম্প্রসারিত হচ্ছে; কিন্তু নারী কর্মকর্তারা পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে ঢাকা বা বড় শহরগুলোতে থাকতে পছন্দ করেন। নারীকর্মী কমার এই প্রবণতা মূলত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বেশি দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ ১৭.৯ শতাংশ থেকে কমে ১৬.৬২ শতাংশে নেমেছে যা বিদেশি, বিশেষায়িত বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে দেখা যায়নি।
পাশাপাশি সামাজিকভাবে কর্মস্থলে নারীর জন্য বেশ কিছু অনিরাপদ পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক নারীকর্মী জানিয়েছেন নিরুপায় হয়েই তারা চাকরি ছেড়েছেন। আমাদের দেশের যে কোনো কর্মস্থলেই নারীর জন্য কাজ করা অত্যন্ত চ্যালেজিং। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই তারা কাজ করেন। শিক্ষিত নারীদের জন্য ব্যাংক খাত মোটামুটি আরামদায়ক, সহনশীল কর্মস্থল ছিল; কিন্তু সম্প্রতি সেই পরিবেশও বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনটি আমলে নারীর জন্য কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারের সরকারের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে