সুন্দরবনের দস্যুদের দমন করুন
সুন্দরবনের বনজীবীদের কাছে এক সময় ছিল বাঘের ভয়, কুমিরের ভয়- এখন ভর করেছে দস্যুদের ভয়। দস্যুদের ভয়ে বনজীবীরা বনের ভেতরে প্রবেশ করতে ভয় পান। ডাকাতরা কখনো তাদের জিম্মি করে ‘মুক্তিপণ’ আদায় করেন, কখনোবা জোর করে জেলেদের দিয়ে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরান। গতকাল শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দস্যুতায় ফিরছে আত্মসমর্পণকারীরা, ‘দুলাভাই বাহিনী’সহ ১৪ দল সক্রিয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৩২টি দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছিল সরকার; কিন্তু সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, গত বছর সরকার পতনের ডামাডোলের সুযোগে দুলাভাই বাহিনীসহ সুন্দরবনে আবার সক্রিয় হয়েছে অন্তত ১৪টি দস্যু দল। তারা নিয়মিত অস্ত্রের মুখে বনজীবীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছে। আত্মসমর্পণকারীদের অন্তত ১১ জন আবারও দস্যুতায় ফিরেছেন। এ কাজে দস্যুদের পৃষ্ঠপোষক উপকূলের প্রভাবশালী এক শ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী, যারা এলাকায় ‘কোম্পানি মহাজন’ নামে পরিচিত। তাদের নির্দেশে জেলেরা নদীতে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরেন।
তারাই দস্যুদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দেন, প্রায় সময় মুক্তিপণও পাঠান। এতে দস্যুদের হাতে যায় টাকার জোগান, অস্ত্রের মজুত আর বিষে নষ্ট হয় সুন্দরবনের পরিবেশ। মধু সংগ্রহে যাওয়া মৌয়াল ও গোলপাতা কাটতে যাওয়া বাওয়ালিদেরও ডাকাতদের মুক্তিপণ দিতে হচ্ছে। কয়রার একটি গ্রামের একজন মৌয়াল বলেন, সুন্দরবনের জলে কুমির, ডাঙায় বাঘের সঙ্গে এখন ডাকাতেরও ভয়। তাদের নৌকার সাতজন মৌয়াল ডাকাত দলের হাতে ধরা পড়লে ৫২ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ডাকাতমুক্ত না হলে আগামী মধু আহরণ মৌসুমে বনে যাবেন না।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এরকম বেশ কয়েকটি আতঙ্কজনক খবর। বনজীবী জেলেরা অভিযোগ করেছেন, শুধু বনদস্যুদেরই নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনরক্ষীদেরও নিয়মিত ‘নজরানা’ দিতে হয়। সুন্দরবনের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ তাদের জীবিকার জন্য পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সুন্দরবনের কোলঘেঁষে এসব মানুষের বসবাস, যারা জীবিকার জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে মাছ, কাঁকড়া, গোলপাতা, মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দবনের গভীরে যান।
তবে গত এক দশকে এসব অঞ্চলের মানুষের আয় কমছে সুন্দবন থেকে। এখন দস্যু-আতঙ্কে বনজীবীরা বনে প্রবেশ করতে পারছেন না, ফলে তাদের আয়-রোজগার আরও কমে যাচ্ছে। এতে করে তাদের একরকম মানবেতন জীবন কাটাতে হচ্ছে। সুন্দরবনের দস্যুদের এই উৎপাত কেবল সুন্দরবন-অঞ্চলের জন্যই ভয়ের নয়, সারা দেশের জন্যই আতঙ্কের।
এই দস্যুদের যাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র চলে গেছে তা দিয়ে তারা হয়তো একদিন অন্যান্য অঞ্চলেও ডাকাতি শুরু করবে। তাই যেভাবেই হোক এই দস্যুদের এখনই দমন করতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে এখনই তৎপরত হতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সারা দেশেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়েছে, তাই নজির দেখতে পাচ্ছি সুন্দরবনেও। আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা কীভাবে আবার দস্যুতায় ফিরতে পারল তার কারণটিও খতিয়ে দেখতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে