জুলাই সনদ নিয়ে সংশয় দূর করুন
গতকাল জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৫২টি দলের মধ্যে ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে গণফোরাম বাদে ২৪টি দলের ৪৮ জন নেতা সনদে সই করেন। আবার সই করা ২৪টি দলের মধ্যে ৪টির ইসিতে নিবন্ধন নেই।
মোটাদাগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়া ৬টি দল (এনসিপি, সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম) সনদে সই করেনি। ফলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনেক দল না যাওয়ার মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই সনদ’ জন্মলগ্নেই সংশয়ের মুখে পড়ল।
সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান তারা। তা ছাড়া, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও জামায়াতও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। এতে করে জনমনে একটা ধোঁয়াশাই তৈরি হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা এক হতে পারবেন কি না তা নিয়ে আগে থেকেই সংশয় ছিল, জুলাই সনদে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকায় সেই সংশয় আরও পাকাপোক্ত হলো।
গতকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শুক্রবার বিকেল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেন তা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
খবরে আরও জানা যায়, অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে দুপুর ১টার দিকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামধারী একদল লোক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে করে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানস্থলে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। এর আগে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা নিয়ে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে শেষ মুহূর্তে সংশোধন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
অনেকরকম বাধা-বিপত্তি-মতানৈক্যের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলেও জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। সনদ স্বাক্ষরিত হলেও তা আসলে কতখানি বাস্তবায়িত হতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। কারণ, এনসিপি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বড় শক্তি এবং নতুন দল হলেও তারা এখন দেশের রাজনীতিতে বড় খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করছে।
তার মানে এখনো অনেক আলাপ-আলোচনা বাকি; কিন্তু নির্বাচনের আগে যদি এসব বিষয় সমাধান না হয়, তাহলে নির্বাচন ঘিরেও জনমনে সংশয় দেখা দেবে। এই সংশয় দূর করার দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর। আমাদের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত জুলাই সনদ বিষয়ে সব সংশয় দূর করবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে