ইসরায়েল-ইরানসহ সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান চীনের
মধ্যপ্রাচ্যের অবনতিশীল পরিস্থিতিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাত আরও তীব্র হওয়া রোধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান এবং সতর্ক করে দিয়েছে চীন।
বুধবার (১৮ জুন) সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের বিরোধিতায় জোর দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন।
‘চীন সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাসহ জাতিসংঘ সনদের নীতি লঙ্ঘনকারী যেকোনো কাজের বিরোধিতা করে’- বলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গুও জিয়াকুনের এই মন্তব্য এসেছে, যিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ঠিক জানে’, খামেনি কোথায় আছেন এবং তিনি ‘আপাতত নিরাপদ’। তবে যোগ করেন, ‘আমাদের ধৈর্য ক্রমশ ছিন্ন হয়ে আসছে’।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমরা ঠিক জানি, তথাকথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, কিন্তু সেখানে নিরাপদ। আমরা তাকে বের করে আনব না, অন্তত আপাতত নয়’। তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা বেসামরিক নাগরিক বা আমেরিকান সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চাই না’।
অন্য একটি ফলো-আপ পোস্টের শেষে ট্রাম্প ইরানের উদ্দেশে লেখেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!’।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস জানিয়েছে, শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর ছয়দিনে ইরানে কমপক্ষে ৫৮৫ জন নিহত এবং এক হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য সোমবার (১৪ জুন) সর্বশেষ বিবৃতিতে ২২৪ জন নিহত ও এক হাজার ২৭৭ জন আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং আরও শতাধিক আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে এখনও ভর্তি রয়েছেন ১৫৪ জন।
আগে হামলা চালানো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ইরানের পারমাণবিক সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন জানান, বেইজিং তার নাগরিকদের রক্ষায়ও পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৯১ জনকে ইরান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং আরও এক হাজার জনেরও বেশি চীনা নাগরিককে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।
কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে, সব পক্ষকে, বিশেষ করে যাদের ইসরায়েলের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে- ‘ন্যায্য এবং বস্তুনিষ্ঠ’ অবস্থান নেয়ারও আহ্বান জানান গুও।
‘মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির উত্থান কারও স্বার্থে নয়। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে উত্তেজনা কমাতে এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা উচিত’- বলেন তিনি।
শুক্রবার থেকে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ধারাবাহিক বিমান হামলা শুরু করে। ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা সংঘাতকে আরও তীব্র করে তোলে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে