চার্লি কার্ক হত্যায় অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন প্রসিকিউটররা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ককে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত টাইলার রবিনসনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানিয়েছেন মামলার প্রসিকিউটররা। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত প্রথম শুনানিতে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন বিচারক। প্রসিকিউশন তাদের পক্ষে নতুন তথ্য-প্রমাণও উপস্থাপন করে। শুনানিতে রবিনসন ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
আদালত জানায়, অভিযুক্ত রবিনসনের মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া টেক্সট বার্তায় সে নিজেই গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছে। এটি মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে ধরা হচ্ছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন চার্লি কার্ক। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ নামক ডানপন্থী যুব রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। ৩১ বছর বয়সী কার্কের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। দেশজুড়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত জনমত, ক্ষোভ এবং প্রতিশোধের ভাষা ছড়িয়ে পড়ে।
ইউটাহ কাউন্টির অ্যাটর্নি জেফ গ্রে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড আমেরিকার জন্য এক ট্র্যাজেডি।’ তিনি জানান, খুনে ব্যবহৃত রাইফেলের ট্রিগারে রবিনসনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও আলামতের সূত্র ধরে দ্রুতই পুলিশ ওই ছাদে পৌঁছে অস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট কিছু জিনিস উদ্ধার করে।
প্রথম শুনানিতে রবিনসনকে দেখা যায় আত্মহত্যা প্রতিরোধী বিশেষ পোশাকে, যা সাধারণত আলোচিত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়। পুরো শুনানিতে রবিনসন চুপ ছিলেন। তিনি কেবল নিজের নাম বলেছেন এবং নিজ পক্ষে কোনো আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন না।
শুনানিতে বিচারক টনি গ্রাফ তার বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ পড়ে শোনান। এর মধ্যে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে অ্যাগ্রাভেটেড মার্ডার, অর্থাৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা। অন্যান্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা এবং সাক্ষীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা। এসব অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি আজীবন কারাদণ্ড ও ১৫ বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
প্রসিকিউশন দাবি করেছে, কার্ককে হত্যা করার বিষয়ে রবিনসন নিজের বন্ধুদের কাছে টেক্সট মেসেজে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এসব টেক্সট তদন্তকারীদের হাতে এসেছে এবং তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর রবিনসন হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং নিজের কম্পিউটারের কিবোর্ডের নিচে একটি নোট রেখে যান যেখানে কার্ককে হত্যার ইঙ্গিত ছিল। এছাড়া তিনি অস্ত্র ও নিজের পোশাক গোপন করার চেষ্টা করেন এবং এক রুমমেটকে প্রমাণ লুকাতে সহযোগিতা করতে বলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ উটাহর সেন্ট জর্জ এলাকায় রবিনসনকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ তার পরিবারের বাড়িতে তল্লাশি চালায়।
এখনও হত্যার উদ্দেশ্য নিশ্চিত হয়নি। তবে উটাহ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর স্পেন্সার কক্স বলেছেন, রবিনসনের রাজনৈতিক মতাদর্শ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বামপন্থায় ঝুঁকেছিল এবং তিনি ইন্টারনেটের ‘অন্ধকার জায়গায়’ বেশি সময় কাটাতেন।
৩১ বছর বয়সী চার্লি কার্ক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন এবং তরুণ রক্ষণশীলদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তার মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিভেদের নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সূত্র: রয়টার্স
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে