Views Bangladesh Logo

জুলাই ঘোষণাপত্রের আলোকে ভয় ও শঙ্কামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

তকাল ৫ আগস্ট, জুলাই-২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের চত্বরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে, দেশের সমস্ত মানুষকে উপস্থিত রেখে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন। এই ঘোষণাপত্র জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ভয়ভীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

আমরা দেখেছি, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল। মানুষ যে কোনো কথা বলতে গিয়ে ভীতি ও শঙ্কা অনুভব করত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের সেই শঙ্কা থেকেই ২০২৪ সালের জুলাইা মাসে মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের পরও সেই ভয়ের সংস্কৃতি দূর হয়নি। বরং মব মন্ত্রাসের নতুন ভয় পুরো দেশকে আতঙ্কের ভূমিতে পরিণত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মব সন্ত্রাসের নামে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ ও গোষ্ঠী অন্যের সম্পদ দখল, লুটতরাজ, হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে।

গত এক বছরে দেশজুড়ে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা দেশ-বিদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ভয়ের সংস্কৃতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই প্রত্যাশা ছিল সবার। আমরা আশাবাদী জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রধান উপদেষ্টা পরমত সহিষ্ণুতা ও সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার যে প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন, তার আলোকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর করার পথে এগিয়ে যাবে বর্তমান সরকার।

সংক্ষিপ্ত ঘোষণাপত্রে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করেছিল।

তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অনেক চড়াই-উৎরাই সামরিক শাসন পার হয়ে এক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পরিবেশের সূচনা করেছিল, তাও বিনষ্ট হয়ে যায় বিগত আওয়ামী লীগ আমলের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে, আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে; যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত হয় এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে সেই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়।

তার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

জুলাই ঘোষণাপত্রে বিগত সময়ের কথা বলতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তনের দিকে। আমরা জানি দুঃশাসন, দুর্নীতি মুক্ত এবং পরমত সহিষ্ণু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পূর্বশর্ত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া। আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলেও ভয় ও শঙ্কা মুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হবে।

আমরাও আশায় বুক বাঁধতে চাই যে, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে দুঃস্বপ্ন, অপশাসন ফিরে আসবে না। ভয়-শঙ্কামুক্ত পরমতসহিষ্ণু এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে জুলাই ঘোষণাপত্রের আলোকে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ