শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিব দুজনেই ছিলেন সেনাবিদ্বেষী: মাহমুদুর রহমান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া সাক্ষ্যে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন’।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে তিনি আরও বলেন, ‘পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যার পর শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পদক্ষেপ নেন।'
হত্যা-গণহত্যাসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল-১ বিচারাধীন মামলাটির অন্য দুজন আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে ৪৬তম সাক্ষী মাহমুদুর রহমানকে পরে জেরা শুরু করেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আলোচিত এ মামলায় এদিন সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে ৪৭তম সাক্ষী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এ মামলায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল মাহমুদুর রহমান ও নাহিদ ইসলামের; কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা ওইদিন আসতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাওয়া হয়। পরে আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
৩ আগস্ট শুরু হয়ে এ পর্যন্ত ১৪ কার্যদিবসে মামলাটির ৪৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের জেরাও শেষ করেছেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। উল্লেখযোগ্য সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন আসামি থেকে প্রসিকিউশনের সাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ২ সেপ্টেম্বর দেয়া সাক্ষ্যে তিনি স্বীকার করেছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়। নিজের ভূমিকার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন ৩৬তম এই সাক্ষী।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সাক্ষ্য দেয়া ছয়জন সাক্ষী হচ্ছেন, ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সিরাজুস সালেহীন, পুলিশের এসআই মো. গোলাম ইফতেখার আলম, সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার বিশারদ শেখ নজরুল ইসলাম, সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের পরিদর্শক মো. রুকুনুজ্জামান ও সিআইডির এসআই মো. শাহেদ জোবায়ের।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, সাক্ষীরা গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে ভয়াবহ হত্যা-গণহত্যার বীভৎস বিবরণ দিয়েছেন। বিশেষত নিহতদের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও অন্যদের এজন্য দায়ী ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম এই মামলাটির বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
৩ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপনের পর থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা চলছে। মামলাটির সাক্ষী রয়েছেন ৮১ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে