জেনে নিন ডেন্টাল ইমপ্লান্টের সুবিধা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আধুনিক ডেন্টাল চিকিৎসায় এক বিপ্লব ঘটিয়েছে ডেন্টাল ইমপ্লান্ট পদ্ধতি। যারা দাঁত হারিয়ে আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন কিংবা দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়া ও কথা বলায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাদের জন্য এই চিকিৎসা একটি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এই চিকিৎসার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অথচ অনেকেই জানেন না ডেন্টাল ইমপ্লান্ট কী, কীভাবে কাজ করে এবং এর ভালো-মন্দ দিক কী হতে পারে।
ডেন্টাল ইমপ্লান্ট কী?
ডেন্টাল ইমপ্লান্ট হলো একটি টাইটানিয়াম ধাতব স্ক্রু, যা ফাঁকা দাঁতের জায়গায় চোয়ালের হাড়ে স্থাপন করা হয়। এটি দাঁতের মূলের মতো কাজ করে এবং এর ওপর একটি কৃত্রিম দাঁত (ক্রাউন) স্থাপন করা হয়। এতে করে নতুন দাঁত দেখতে একেবারে প্রাকৃতিক দাঁতের মতো লাগে এবং কার্যকারিতাও হয় দারুণ। মূলত ডেন্টাল ইমপ্লান্ট শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি একজন মানুষের খাওয়া, চিবানো, কথা বলা এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অমূল্য ভূমিকা রাখে। ইমপ্লান্ট প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমত রোগীর মুখ ও চোয়ালের হাড়ের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়। প্রয়োজনে এক্স-রে বা সিটিস্ক্যান করা হয়।
ইমপ্লান্ট বসানো
লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে রোগীর সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত অবস্থায় চোয়ালের হাড়ে টাইটানিয়াম ইমপ্লান্ট স্থাপন করা হয়। ইমপ্লান্টটি হাড়ের সঙ্গে জুড়ে যেতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। হাড়ের সঙ্গে ইমপ্লান্ট স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে গেলে ওপরের অংশে কৃত্রিম দাঁত বসানো হয়।
ডেন্টাল ইমপ্লান্টকে সুবিধা
একবার বসালে সঠিক যত্নে ইমপ্লান্ট ১৫-২০ বছর এমনকি আজীবন টিকে থাকতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখে, ডেন্টাল ইমপ্লান্টকে ফলে দাঁত দেখতে ও ব্যবহার করতে প্রাকৃতিক দাঁতের মতোই। তাছাড়া কোনো ঝামেলা ছাড়াই স্বাভাবিক খাওয়া ও কথা বলা সম্ভব। পাশের দাঁতের ক্ষতি হয় না: ব্রিজের মতো পাশের দাঁতের কাটাকাটি বা ক্ষয় হয় না।
হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ
দাঁতের মূল না থাকলে চোয়ালের হাড় ক্ষয়ে যায়, ইমপ্লান্ট সেই ক্ষয় ঠেকাতে সাহায্য করে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি
যদিও ডেন্টাল ইমপ্লান্ট একটি নিরাপদ পদ্ধতি, তারপরও কিছু জটিলতা হতে পারে। বিশেষ করে, অস্ত্রোপচারের পর যদি যথাযথ পরিচর্যা না করা হয়। আবার অপারেশনের সময় ভুল হলে সাময়িক অসাড়তা বা ব্যথা হতে পারে। উপরের চোয়ালে ইমপ্লান্ট বসালে কিছু ক্ষেত্রে সাইনাসে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এসব ঝুঁকি অভিজ্ঞ সার্জনের কাছে চিকিৎসা করালে একেবারে কমে যায় বলে জানান ডা. ইমরান হোসেন।
কারা এই চিকিৎসা করাতে পারবেন? যাদের দাঁত হারিয়েছে, যাদের চোয়ালের হাড় যথেষ্ট ঘন ও শক্ত, যাদের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিরা। তবে যাদের মুখের স্বাস্থ্যবিধি খারাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস, অথবা যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করেন তাদের জন্য ডেন্টাল ইমপ্লান্ট সুপারিশ করা হয় না।
সচেতনতার বার্তা
অনেকেই ভুল ধারণা নিয়ে ইমপ্লান্ট চিকিৎসা এড়িয়ে চলেন। তবে জেনে রাখা ভালো, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে ফাঁকা দাঁতের জায়গায় পাশের দাঁত ঢলে পড়ে, চোয়াল বেঁকে যায় এবং হাড় ক্ষয় হতে পারে। ইমপ্লান্টকে মাধ্যমে আপনি সেই ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারেন। ডেন্টাল ইমপ্লান্ট এখন আর বিলাসিতা নয়- এটি একটি কার্যকর ও আধুনিক সমাধান। ডেন্টাল ইমপ্লান্ট আপনার মুখের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনবে এবং আপনাকে দেবে আত্মবিশ্বাসে ভরা এক নতুন জীবন। আর তাই, ডেন্টাল ইমপ্লান্ট করার জন্য ইমপ্লান্টোলজিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন ডেন্টাল সার্জন বেছে নেয়াই শ্রেয়।
ডা. মো. ইমরান হোসেন: চিফ কনসালট্যান্ট, ডেন্টাল ভিউ অর্থোডন্টিকস অ্যান্ড ইমপ্লান্ট সেন্টার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে