Views Bangladesh Logo

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর নেই

চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে “আজ (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ছয়টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত‍্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেন তার ব‍্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

এসময় হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার জ‍্যেষ্ঠ ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, ছেলের বউ ডা. জোবায়দা রহমান, নাতনী জাইমা রহমান, ছোট ছেলের বউ শার্মিলী রহমান সিঁথি, ছোট ভাই শামীম এসকান্দার, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, বড় বোন সেলিনা ইসলাম সহ সকল আত্মীয় স্বজন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সকল চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেগম খালেদা জিযয়ার নামাজে জানাজার সময়সূচী পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে। তবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগামীকাল বুধবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।

বেগম খালেদো জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনবদ্য অবদান রেখে ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধী পেয়েছিলেন দেশবাসীর কাছে। তার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমনের হাতে গড়া বিএনপিকে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণমানুষের দলে পরিণত করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি তিন মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে দেশব্যাপী গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার চলে যাওয়ার এ ক্ষতি কখনই পূরণ হওয়ার নয়। বাংলাদেশের মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বেগম খালেদা জিয়াকে। যুগে যুগেড় গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন ‘আপসহীন নেত্রী’ বেগম খালেদা জিয়া।

বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯৪৫) বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোর পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি দুই দফায়—১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত—বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

খালেদা জিয়ার জন্ম নাম খালেদা খানম পুতুল। তার জন্ম দিনাজপুরে। বাবা ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ছিলেন গৃহিণী। দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬০ সালের আগস্টে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তার স্বামীর নামানুসারেই তিনি ‘খালেদা জিয়া’ নামে পরিচিত হন।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলে খালেদা জিয়া দেশের ফার্স্ট লেডি হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং দ্রুত দলের নেতৃত্বে উঠে আসেন। সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। তার প্রথম মেয়াদেই বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট বিজয়ী হলে তিনি তৃতীয়বারের মতো সরকারপ্রধান হন এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

তার রাজনৈতিক জীবনে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন বিরোধী দলনেতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সংসদ ও রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।


ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জননী। বড় ছেলে তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। ফোর্বস সাময়িকীর প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় তার নাম স্থান পায় এবং বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা তাকে গণতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকার জন্য সম্মাননা দেয়।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ