তামাক নিয়ন্ত্রণ বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য খাত বর্তমানে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালকে ধরা হচ্ছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সঙ্কট ও সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে সরে আসা এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য রক্ষাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও গত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলন উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। এই আন্দোলনই এখন জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অন্যতম কার্যকর, সাশ্রয়ী ও তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই বাস্তবতায় ২৩ থেকে ২৫ জুন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন টোব্যাকো কন্ট্রোল ২০২৫’। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার, নাগরিক সমাজ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন, যেখানে বাংলাদেশেরও প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে নিজ দেশের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণকে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় জনস্বাস্থ্য অর্জন হিসেবে ধরা হচ্ছে। ডব্লিউএইচ-এর ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০০৭ সালে যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ছিল ২২ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশে। বাংলাদেশেও ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ধূমপানের হার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও এই অগ্রগতি সন্তোষজনক, তবুও এটি এখনো আন্তর্জাতিক মানের ধূমপানমুক্ত পরিবেশ গঠনে পুরোপুরি সফল নয়। বিশেষত, তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা বন্ধে এখনও ঘাটতি রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। সংশোধনীগুলো পাশ হলে, তা দেশের তামাকবিরোধী আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবে। এ লক্ষ্যে দেশের নাগরিক সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী মৈত্রি, প্রজ্ঞা, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনসহ বেশ কিছু সংগঠন বছরের পর বছর ধরে তথ্যভিত্তিক সচেতনতামূলক প্রচারণা ও আইন সংশোধনের দাবিতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে আসছে।
বিশ্ব সম্মেলনে ডব্লিওএইচও ‘গ্লোবাল টোব্যাকো এপিডেমিক রিপোর্ট ২০২৫’ প্রকাশ করার কথা রয়েছে। যেখানে ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ অগ্রগতির বিশদ চিত্র তুলে ধরবে। এই প্রতিবেদনে ধূমপানমুক্ত আইন, ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণ, তামাক পণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা এবং কর বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা থাকবে। একই সময়ে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজ গ্লোবাল টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাওয়ার্ডস-এর মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কার্যকর নীতিমালার স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে নারী মৈত্রি সংস্থার প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এই সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নেয়ার এক বড় সুযোগ। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস থাকলে তামাকশিল্পের প্রভাব মোকাবিলা করে একটি তামাকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে