‘তদবির বাণিজ্য’ থেকে বাংলাদেশকে বেরিয়ে আসতে হবে
তদবির ছাড়া বাংলাদেশে কোনো কাজ হয় না এমন কথা বহু বছর ধরেই প্রচলিত আছে। চাকরিপ্রাপ্তি থেকে হাসপাতালে ভর্তি, স্কুলে ভর্তি, বদলি, পদোন্নতি, টেন্ডার, ব্যবসায়িক নিবন্ধন- সবকিছুতেই এদেশে তদবিরের প্রয়োজন। তা হোক সরকারি, বেসরকারি যে-প্রতিষ্ঠানই হোকে। শোনা যায়, পিয়নের চাকরিও এ দেশে আজ আর তদবির ছাড়া হয় না। পদ যত উঁচু, কাজ যত বড় তা বুঝে ধরতে হয় তত বড় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যার ফলে এমপি-মন্ত্রী-সরকারি বড় কর্তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রেখে তদবির আদায়ই এ দেশের একশ্রেণির মানুষের দীর্ঘকালব্যাপী বাণিজ্য।
গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে প্রায় এক বছর হয়ে গেল। দেশ নতুন করে গঠিত হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম দেশের অনেক কিছুই বদলে যাবে। সংস্কার শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থায় হবে না, সংস্কার হবে মানুষের মনে-মননে, চিন্তা-চেতনায়; কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দেশ চলছে সেই পুরোনো ধারাতেই। এখনো তদবির বাণিজ্য চলছে দেদার। এ কথার প্রমাণ পাওয়া গেল খোদ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বরাতেই।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় আইন উপদেষ্টা বলেন, কারও অন্যায় তদবির মেনে না নিলেই সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বাস করবেন, আমার কাছে বহুত (অনেক) অন্যায় তদবির আসে। যে মুহূর্তে তদবিরগুলো মানি না; দেখা যায় যার তদবির, অন্যায় তদবির রাখিনি, কিছুদিন পর সে আমাকে ভারতের দালাল বলা শুরু করে দেয়। ৪০-৫০ বছর আগে আমার সঙ্গে কার কোন সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বানানো শুরু করে দেয়। যা ইচ্ছা বলে। ওই যে ঝিনুক, নীরবে সও, সহ্য করে যাই। কিচ্ছু করি না। মামলা তো দূরের কথা, কোনো উত্তরও দেই না।’
প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যায় তদবির আনলে তখনই কেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হয় না? তাদের কি এতই ক্ষমতা যে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধেও তারা অপ্রচার চালাতে পারেন? তারা কারা? তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া তো সরকারের দায়িত্ব। আমরা জানি এ ধরনের অনেক অন্যায় দাবি-তদবির সরকারের ওপর মহলে যায়, নানা কারণেই সরকারকে এসব হজম করতে হয়, কখনো কখনো প্রশ্রয়ও দিতে হবে; কিন্তু এই তদবির বাণিজ্য থেকে বেরুতে না পারলে তো বাংলাদেশ খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারবে না। তদবিরের মাধ্যমে অযোগ্যরাই সুবিধা আদায় করে নেন, যোগ্যরা পিছিয়ে পড়েন।
তারপর আসিফ নজরুলকে ধন্যবাদ, যে তিনি এমন স্পর্শকাতর বিষয়টি সামনে এনেছেন। এখানে তার যেমন, সমস্ত উপদেষ্টাদেরই, এমন কি পুরো রাষ্ট্রকাঠামোটিরই দুর্বলতা ধরা পড়েছে। আমরা চাই তদবির বাণিজ্য বন্ধ করার মধ্য দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে