Views Bangladesh Logo

কেজি দরে বিক্রি দুর্লভ বই

বইয়ের মূল্য বোঝেনা বাংলা একাডেমি!

ম্প্রতি কিছু দুর্লভ বাংলা ও ইংরেজি বই বাংলা একাডেমি থেকে বিক্রি হয়ে গেছে কেজি দরে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিল্প-সাহিত্য সমঝদারদের মধ্যে উঠে আলোচনা এবং সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠেছে: এসব বইয়ের মূল্য কি সত্যিই বোঝে নি বাংলা একাডেমি? এভাবে কি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে না?’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে যায়, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালার প্রায় ২০টি বাংলা এবং ইংরেজি বই কেজি দরে বিক্রি করেছে বাংলা একাডেমি। জাহানারা ইমামের পরিবার তার ব্যক্তিগত সংগ্রহের এই বইগুলি দিয়েছিল বাংলা একাডেমিকে আর বাংলা একাডেমি এসব বই সংরক্ষণ না করে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে পুরনো বই বিক্রির ফেসবুক পেইজে সেসব বইয়ের বিজ্ঞাপন দেখা যায় যেখানে এসব বইয়ের চড়া দাম হাঁকা হয়।

এসব বইয়ের মধ্যে শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইটির জন্য দাম হাঁকা হয়েছে অন্তত এক লাখ টাকা। ১৯৬৭ সালের ৪ মার্চ শহীদুল্লা কায়সার নিজে জাহানারা ইমাম এবং তাঁর স্বামী শরীফ ইমামকে বইটি উপহার দিয়েছিলেন। লেখক নিজ হাতে লিখেছিলেন ‘জনাব ইমাম ও জাহানারা ইমামকে শুভকামনার নিদর্শন হিসেবে লেখক।' পুরাতন বই বিক্রির পেইজ ‘বিচিত্র বিচিত্র বই’ এ ‘সংশপ্তক’ এর বিজ্ঞাপন আসে এ বছরের ৩১ আগস্ট। সে বিজ্ঞাপনে এটাও বলা হয়, চাহিদা অনুযায়ী দাম না পেলে সংশপ্তকের এই সংখ্যাটি বিক্রি না করে ‘সিন্দুকে’ রেখে দিবেন বিক্রেতা।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মো. রাশেদ জানান, তারা এসব বই বাংলা একাডেমি থেকে কিনেছেন লট ধরে। তিনি আরও জানান, জাহানারা ইমামের ব্যক্তিগত সংগ্রহের এসব বইয়ের মধ্যে তারাই সবচেয়ে বেশি বই পেয়েছেন। এসব বইয়ের মধ্যে আহমদ শরীফ এবং আবু জাফর ওবায়দুল্লাহসহ আরও কয়েকজন গুণীজন স্বাক্ষরিত বইও তিনি পেয়েছেন।

এই পেইজটি ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয় ১৮ সেপ্টেম্বর আর পাখির গান বনের ছায়া বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয় ৮ অক্টোবর। ১৯৬৮ সালে জাহানারা ইমামের জন্মদিনে একজন তাঁকে মস্কোর প্রগতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসটি উপহার দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, শহীদ আখন্দের লেখা 'পাখির গান বনের ছায়া’, বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত বইটি লেখক নিজে স্বাক্ষর করে উপহার দিয়েছিলেন জাহানারা ইমামকে। জাহানারা ইমামের ‘সাঁতার শেখা’ ও ‘মজার খেলা তাস’ বই দুটি এই পেইজ থেকে ইতোমধ্যে বিক্রিও হয়ে গেছে। এসব বইয়ের কোনোটির দাম ৬০০ আবার কোনোটির দাম ধরা হয়েছে ৩৪০ টাকা।

এর বাইরে, পুরনো বই বিক্রির ফেসবুক পেইজ ‘পুস্তক জোন’ গত ২২ সেপ্টেম্বর পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত জর্জ বার্নাড শ এর ‘প্লেস আনপ্লিজেন্ট’ বইটি বিক্রির পোস্ট দেয়। বইয়ের ভেতরে বাংলা একাডেমির সিল, পাশে লেখা– ‘জাহানারা ইমামের ব্যক্তিগত সংগ্রহ’। এখান থেকেই জাহানারা ইমামের ছেলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শাফী ইমাম রুমি স্বাক্ষরিত ফ্রিডম ভার্সেস অর্গানাইজেশন, দ্য কমপ্লিট ওয়ার্ক অব উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ার, জর্জ অরওয়েলের নাইনটিন এইট্টিফোর বইগুলো বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।যোগাযোগ করলে জানা যায়, কেজি দরে নীলক্ষেত থেকে বই কিনে বাছাইয়ের সময় তারা বাংলা একাডেমির সিল দেয়া এসব বই পায়।

পুরাতন বই বিক্রির আরেকটি প্লাটফর্ম ‘দুর্লভ বই’ জাহানারা ইমামের সংগ্রহের ‘পথ বেঁধে দিল’ বইটি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়।

এব্যাপারে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারে যারা বই জমা দিয়েছিলেন, তাদের বই থেকে ডুপ্লিকেট কপি, মানহীন বই বাছাইয়ের জন্য ২০১৪ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি বই বাছাই করে বাতিলযোগ্য কিছু বই নির্ধারণ করেছিল।এত দিন এই বইগুলো একাডেমির দোতলার একটা কক্ষে রাখা ছিল। এখন সেগুলোই বিক্রি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর বইমেলায় যে বিপুলসংখ্যক বই একাডেমিতে জমা হয়, সেগুলোর কিছু অংশ বাছাই করে লাইব্রেরিতে রাখা হয়। বাকিগুলো বাতিলের তালিকাভুক্ত হয়। অনেক বছর জমা হওয়ার ফলে বাংলা একাডেমির দোতলার কক্ষটি সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। ফলে, এই বইগুলি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ