Views Bangladesh Logo

লালন মেলায় আঘাত মানে আবহমান সংস্কৃতির ওপরই আঘাত

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কাশিপুরের নরসিংহপুর গ্রাম। এই গ্রামের ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি’ প্রাঙ্গণে প্রতি বছর সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালনভক্তরা এই আয়োজনে যোগ দেন। সাত বছর ধরেই শান্তি-সম্প্রীতি ও আনন্দের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানটি পালিত হয়; কিন্তু সব আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরও এবার আর সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা হচ্ছে না। এমন খবর দেশের সংস্কৃতির জন্য অনভিপ্রেত।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, লাললমেলা বন্ধের নেপথ্যে হুমকিদাতার নাম হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল। হেফাজত নেতার হুমকির পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও লালন মেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুমতি দিতে অপারগতা জানানো হয়। পুলিশকে জানিয়েও নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাননি বলে জানিয়েছেন মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল।

সাধুসঙ্গ ও মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে বাউল-ফকির ও লালনভক্তরা এসেছিলেন; কিন্তু আতঙ্কের মুখে তারা অনেকে চলে গেছেন, অনেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখানে অনুষ্ঠান করলে সব পুড়িয়ে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে; কিন্তু অনেক সংবাদমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করেছে নরম করে, ‘আপত্তির মুখে লালন মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে,’ বা চাপে পড়ে লালন মেলা বন্ধ করা হয়েছে। আসলে তো এটি হুমকি। শুধু লালন মেলার ওপর নয়, লালনের ওপর নয়, আবহমান বাংলা সংস্কৃতির ওপরই হুমকি। কারণ ফকির লালন সাঁইর মধ্য দিয়ে বাংলার হাজার বছরের সহজিয়া দর্শন প্রকাশিত হয়েছে। লালন অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক।

মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোনো অভিযোগও উত্থাপন করেননি অভিযোগকারীরা। তারা শুধু বলেছেন, এই মেলা ‘ইমান বিধ্বংসী’। কীভাবে সেই ইমান ধ্বংস হয় সেটা বলেননি। এরকম অভিযোগ উত্থাপন করলে দেশের সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই বন্ধ করে দিতে হয় এবং এটাকে এখনই প্রতিহত করা না গেলে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের সব শিল্প-সংস্কৃতির ওপরই আঘাত আসবে। যেখানে প্রয়োজন ছিল হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার করা, সেখানে প্রশাসন নিরাপত্তার অজুহাতে লালন মেলাই বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে বোঝা যায় প্রশাসনও সংস্কৃতিবিরোধী এবং হুমকিদাতাদেরই তারা উৎসাহ দিতে চায়।

সে ক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, আবহমান বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার আধার লালন সাঁইয়ের নামে মেলার কার্যক্রম বন্ধের ঘটনা প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সহায়ক নয়। যারা লালন মেলা বন্ধের হুমকি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে মেলার অনুমতি বাতিল করা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আমরা অতীতে দেখেছি, বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে লালন মেলায় বাধা দিতে; কিন্তু দুঃখজনকভাবে কোনো ঘটনাতেই দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

আমরা চাই, এরকম অপ্রীতিকর আর কোনো ঘটনা যেন বাংলাদেশে না ঘটে। উগ্র ধর্মীয়গোষ্ঠীগুলোকে বলতে চাই, আপনারা যদি ধর্মীয় অজুহাতে কথায় কথায় আবহমান বাংলার সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানেন, তাহলে তা দেশের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না। বাংলাদেশ পরিণত হবে একটি সাম্প্রদায়িক দেশে। প্রশাসনকেও বলতে চাই, কোনো বিশেষ গোষ্ঠী-পক্ষের হুমকিতে পরাজিত না হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এমন ধরনের ঘটনা ভালো লক্ষণ নয়। এখনই সাবধান হোন। সর্বোপরি শুভবুদ্ধি জাগরণের মধ্য দিয়ে বাংলার ধর্ম-সংস্কৃতির সাম্প্রদায়িক বন্ধন অটুটু থাকুক- এটাই প্রত্যাশা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ