আনোয়ারা বেগম জামিন পেলেন, জাতি জামিন পাবে কি?
আনোয়ারা বেগমের বয়স ৬৯। কন্যা নাবিলা মাহজাবিনের বক্তব্যে জানা যায় তার মা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। হাড়ক্ষয়ের রোগের কারণে ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না। চার বছর হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন। অবসরের পর থেকে তাদের মা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেই।
গত বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি একাডেমিক সভায় যোগ দিতে আনোয়ারা বেগমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অসুস্থ শরীর নিয়েই দায়িত্ববোধের প্রয়োজনে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন তখন একদল যুবক তার মাকে ঘিরে ধরেন। খবর পেয়ে সূত্রাপুর থানা আনোয়ারা বেগমকে থানায় নিয়ে যান।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, অধ্যাপক আনোয়ারা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। চার দিন পর গতকাল সোমবার (২ জুন) আনোয়ারা বেগমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
প্রশ্ন অনেকগুলো: প্রায় ৭০ বছরের একজন অসুস্থ নারীকে পুলিশ কীভাবে ধরে থানায় নিয়ে গেল? আদালতই-বা কীভাবে প্রথমে তার জামিন নাকচ করে দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন? জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ যদি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েই থাকে চার দিন পর তাকে জামিন দেয়া হলো কেন? তার তো শাস্তি হওয়াই উচিত। হয় আদালত প্রথমবার ভুল করেছে না-হয় দ্বিতীয়বার। একজন বয়স্ক নারী কেন আদালত কর্তৃক এমন ভুল বিচারের শিকার হবেন?
অধ্যাপক ছাড়াও আনোয়ারা বেগমের আরেক পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাহলে কি মুক্তিযোদ্ধা হওয়াই আনোয়ারা বেগমের একমাত্র অপরাধ? জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখছি অনেক মুক্তিযোদ্ধাকেই ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত অসুস্থ একজন বয়স্ক নারী বাসায় বসে থেকে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবেন সেটা আদালতের প্রথমেই বিবেচনা করা উচিত ছিল।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখেছি যার-তার নামে ঢালাও হত্যামামলা চলেছে। এসব ঢালাও হত্যামামলা জুলাই অভ্যুত্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান কেউই সহজভাবে মেনে নেননি। এরকম একটা বিতর্ক সামনে এসেছে বটে, যে জুলাই যেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষেই দাঁড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে এখন অনেকে অনেকরকম ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন। আমরা চাই না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাক। তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু প্রশ্নবিদ্ধ না, কালিমালিপ্ত হবে। কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা বয়স্ক মানুষকে যেন এভাবে আর অপমান-অপদস্ত না করা হয় তার বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালতকে সচেতন থাকতে হবে। আনোয়ারা বেগম জামিন পেয়েছেন; কিন্তু এই লজ্জার হাত থেকে এ জাতি জামিন পাবে কি না সেটা আমাদের প্রশ্ন রয়ে গেল।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে