ডাকসু নির্বাচন: অনিয়মের অভিযোগ, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ফের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ব্যালট বাক্স আগেই পূর্ণ পাওয়া, পোলিং এজেন্টদের অদলবদল ও বের করে দেয়া, ভোটকেন্দ্রে অব্যবস্থাপনা, এমনকি নির্দিষ্ট প্রার্থীদের সুবিধা দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক সংগঠন ও প্রার্থী। এসব অনিয়মে প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছে। তার ভাষায়, ‘শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার এখানে তামাশায় পরিণত হয়েছে।’
স্বতন্ত্র ঐক্যজোটের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমার অভিযোগ, তাদের পোলিং এজেন্টদের ইচ্ছাকৃতভাবে অদলবদল করা হয়েছে। মেয়েদের হলে ছেলেদের এজেন্ট ও ছেলেদের হলে মেয়েদের এজেন্ট বসানো হয়েছে। প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিলেও সমস্যার সমাধান করেনি, বরং প্রার্থীদেরই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যেসব এজেন্ট বাদ দেয়া হয়েছে, তাদের কারণ জানানো হয়নি। অথচ ভোট গণনার সময় তাদের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ভোটকেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার কথাও উল্লেখ করেন উমামা। তার অভিযোগ, কেন্দ্রের সংখ্যা কম হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ভোটারদের। ফোন ও ব্যাগ রাখার ব্যবস্থা নেই, স্যালাইন ও পানির ব্যবস্থাও করা হয়নি।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ জানান, তাদের এজেন্টকে বের করে দিয়ে ছাত্রদলের এজেন্টকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। তিনি প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই তিনি কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। তবে কিছু কেন্দ্রে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ছবিসহ লিফলেট বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের সুবিধার্থে এটি করা হয়েছে, অন্য প্যানেলও একই কাজ করেছে।’
পোলিং এজেন্ট সংখ্যা প্রসঙ্গে আবিদ জানান, শুরুতে প্রশাসন প্রতি কেন্দ্রে একজন করে অনুমতি দিলেও পরে তা পরিবর্তন করে আটজন নির্ধারণ করে। নানা অভিযোগ থাকলেও পরিবেশ উৎসবমুখর রাখতে তারা প্রকাশ্যে বড় অভিযোগ করেননি।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন (ইশা) সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. খায়রুল আহসান মারজান অভিযোগ করেন, তাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে। তার ভাষায়, ‘এই নির্বাচন কোনোভাবেই মুক্ত, স্বচ্ছ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে না।’
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের দাবি, অমর একুশে হলে ব্যালট বাক্স আগেই পূর্ণ পাওয়া গেছে। তারা একে ‘নির্বাচনের নামে প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
একাধিক সংগঠন বলছে, আচরণবিধি ভঙ্গ হলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন রাখেন, ‘নির্বাচন যদি এমন হয়, তবে ডাকসুর গুরুত্ব কোথায়?’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে