Views Bangladesh Logo

ভর্তিতে ‘শিক্ষা কোটায়’ অনিয়মের অভিযোগ কাম্য নয়

সন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য তিন দফা বাছাই শেষে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে। অথচ এর মধ্যেই একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে দুই ধরনের ‘শিক্ষা কোটা’ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোটার অপব্যবহারের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে।

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-১) এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি স্কুল-কলেজ ও কার্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আরও ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-২) রাখা হয়েছে। তবে পৃথক কোটা হওয়া সত্ত্বেও অধীন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অনেকেই শিক্ষা কোটা-১–এ আবেদন করে নির্বাচিতও হয়ে গেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিন দফায় আবেদন করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় নির্বাচিত হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ জন, শিক্ষা কোটা-১–এ ২ হাজার ৭৭ জন এবং শিক্ষা কোটা-২–এ ১ হাজার ২৯৪ জন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রথম দফায় আবেদনের ফলাফল প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে। এরপর আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়, ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কোটার সঠিক প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে ভর্তি বাতিল হবে। কিন্তু তিন দফায় অর্থাৎ ভর্তির বাছাইকাজ শেষ হওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষা কোটা-১ অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান কোটার বিপরীতে নির্বাচিত হয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী, যা স্পষ্টই অনিয়ম বলে বোঝা যাচ্ছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের সন্তান এবার এসএসসি পাস করেছে।

অভিভাবকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা বলছেন, মেধা ও প্রতিযোগিতার জায়গায় কোটা থাকায় প্রকৃত যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে পারছে না অথচ কোটার কারণে কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজে সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে কোটার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে।

সাধারণভাবেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য থাকে ভালো কলেজগুলোতে ভর্তি হবার। সে ক্ষেত্রে ধরনের অনিয়ম হলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন সেটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থী, অভিবাবক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব অভিযোগ অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আমলে নিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এ-ধরনের অনিয়ম জাতির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যা আমরা বিগত সময়গুলোতেও দেখেছি। অনেক সময় বিশেষ কোটার জোরে অনেক অমেধাবী শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলেও মেধাবীদের সাথে একই গতিতে চলতে পারে না। ফলে একদিকে যেমন ওই নিদির্ষ্টি শিক্ষার্থীরও ক্ষতি হয় তেমনি শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশও নষ্ট হয়। এ সব ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রশাসনকে আরো গুরুত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ