Views Bangladesh Logo

বন্যা মোকাবিলায় অগ্রিম প্রস্তুতি জরুরি

দীর্ঘদিন তীব্র তাপপ্রবাহের পর টানা বর্ষণে নাগরিক জীবনে যেমন স্বস্তি এসেছে, তেমনি নদী ও হাওর অঞ্চলের জনজীবনে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবারের ভারি বর্ষণ যেন কবিগুরুর ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’ গানের কথাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। প্রতি বছরই মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে এমন সময় ও পরিস্থিতিতে দেশে বন্যা আসে। হিমালয়ের পাদদেশে হাজার নদীর বঙ্গীয় ব-দ্বীপে এটা এক অনিবার্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের ভারী বৃষ্টিপাত নদীপথ গড়িয়ে এসে এখানে বন্যা ঘটায়। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা।

এরই মধ্যে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় উত্তর শ্রীপুরের মতো ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ১৭টি স্থানে মুহুরি, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ধসে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩৫টি গ্রাম। ফেনী সদর, ফুলগাজী ও পরশুরামে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গতকাল রাত থেকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সড়কটিতে ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আরো অন্তত ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সমুদ্র কিছুটা উত্তাল থাকায় বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখানো হয়েছে। গত দুই বছরের বন্যায় কয়েকটি জেলার সড়ক, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়ে সারাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছিল। সেই সময় কয়েক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু দালান ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল।


সরকারি হিসাব মতে, মাসব্যাপী বন্যায় জেলার ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এ বছর ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কার আগে ভাগে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি, উদ্ধার তৎপরতা কীভাবে চলবে, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেমন হবে–এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। যদি বন্যা মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের অনেক সুনাম আছে। তবু সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

আমরা অতীতে দেখেছি, ভালোভাবে বন্যা মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতিকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার আভাব। তাই সরকারে পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ, ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ করা হলেও তা সমন্বয়হীনতার কারণে বন্যার্তদের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা পৌছাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।

আমাদের যা দরকার, তা হলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো যায়। ত্রাণ ও চিকিৎসা দলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ চালু করা।

মনে রাখতে হবে, সরকারি ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, গাফিলতি, অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সাধারণত পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত ওষুধপথ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ