যমজ সন্তানসহ গ্রেপ্তার গৃহবধূ
ভুল স্বীকারে ক্ষমা হতে পারে না, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি
‘কমন সেন্স’ এর সাধারণ বাংলা অর্থ হলো স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি। যে কোনো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই সেটা থাকা জরুরি। তা নাহলে সব কাজেই সে গোলমাল পাকিয়ে ফেলে। যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন তাদের কমনসেন্স থাকা আরো বেশি জরুরি। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য বোধহয় ওই সাধারণ বিচারবুদ্ধিটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। তারা মাঝে মাঝে এমন কিছু ‘কাণ্ড’ করেন যা শুনলে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়। যেমন গতকালের একটি সংবাদ আমাদের বিমূঢ় করে দিল।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জমি নিয়ে মারামারির মামলায় গভীর রাতে এক গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করে তার ছয় মাস বয়সী যমজ সন্তানসহ থানায় নিয়ে যায় নান্দাইল মডেল থানার পুলিশ। পরদিন শিশু দুটিসহ ওই নারীর ছবি থানার ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। এ ছবি ব্যবহার করে বাদীপক্ষও নানা কুৎসা ছড়ায়। পুলিশের এমন তৎপরতায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই নারী। থানার ওসি বলছেন, এটা একটা মিসটেক (ভুল) হয়ে গেছে।
এটাকে শুধু কমন সেন্সের অভাব বললেও অপরাধটিকে খাটো করে দেখা যায়। এটা স্পষ্টতই মানবাধিকারের লঙ্ঘন, এবং কোনো নাগরিককে, বিশেষ করে তিনি যদি নারী হন এবং তার সাথে যদি ছয়মাস বয়সী যমজ শিশু সন্তান থাকেন, তাদেরসহ থানারই ফেসবুক পেজে ছবি প্রকাশ করা- এটা শুধু গর্হিত অপরাধ না, প্রায় একটা ফৌজদারি অপরাধ। এর জন্য থানার ওসি শুধু বলবেন, ‘মিসটেক হয়ে গেছে’, আর আমরা তাকে ক্ষমা করে দেব- এটা হতে পারে না।
ওই নারী যতই অপরাধ করুক, তিনি যদি খুনের আসামীও হন তাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য একজন নারীর সাথে এমন অসদাচরণ করতে পারেন না। তা ছাড়া ওই নারীর বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়, জমি নিয়ে মারামারির সময় ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। তবু তাকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে দুই অবুঝ শিশুসহ তার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। এর পর পোস্ট দিয়েছে বাদীপক্ষ। ঘটনার বিবরণে বোঝা যায় থানার পুলিশ বাদীপক্ষর হয়ে কাজ করেছে। তিনি একই সাথে দুটি অপরাধ করেছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধ থেকে মারামারির জেরে গ্রামের জিয়াউর রহমান তার ভাতিজা ও তার স্ত্রীর নামে আদালতে মামলাটি করেছিলেন। মামলায় প্রথমবার আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন পান গৃহবধূ। কিন্তু শিশু দুটি অসুস্থ থাকায় দ্বিতীয়বার হাজিরা দিতে পারেননি। এতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরই থানার এসআই আসাদ ৯ জুলাই গভীর রাতে গিয়ে ওই গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করে তার যমজ শিশুসহ থানায় নিয়ে যান। পরদিন থানার ফেসবুক আইডিতে অন্য আসামিদের সঙ্গে দুই শিশুসহ ওই নারীর ছবি পোস্ট দেওয়া হয়। এ আইডিতে থানার দৈনন্দিন পারফরম্যান্স তুলে ধরা হয়।
গৃহবধূর স্বামী জানান, প্রতিপক্ষ একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে তাদের হয়রানি করে যাচ্ছে। তিনি তার স্ত্রীর সম্মানহানির বিচার দাবি করেন। জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ফকির বলেন, গভীর রাতে বাড়িতে গিয়ে আসামি ধরার কোনো বিধান নেই। তাছাড়া নারীসহ শিশুদের থানায় এনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সরাসরি ছবি দিয়ে পোস্ট দেওয়াটাও পুলিশের উচিত হয়নি।
যেখানে গভীর রাতে একজন গৃহবঁধুকে সন্তানহ থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া ‘উচিত’ হয়নি বলেই জানাচ্ছেন জর্জ কোর্টের অ্যাডভোকেট, সেখানে ছবি তুলে ছেড়ে দেয়া আরো কতটা সঙ্গতিপূর্ণ। ‘উচিত’ হয়নি এরকম নরম স্বরে বলে অপরাধ হালকা করা যাবে না। স্পষ্টভাবে বলতে এটা বড় ধরনের অপরাধ; এবং ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে