Views Bangladesh Logo

শান্তিপূর্ণ ডাকসু নির্বাচনের প্রত্যাশা

জ ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু)। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বিকেলের মধ্যেই ফলাফল জানা যাবে। জানা যাবে কে হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম সহ-সভাপতি (ভিপি) ও জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের ওপরের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় যেমন এ দেশের রাজনীতি-সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। যার কারণে ডাকসুকে বলা দ্বিতীয় সংসদ। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। গত ২৬ আগস্ট থেকে শুরু হয় প্রচার। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর প্রচার চলেছে গত ১৩ দিন। এই সময়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বড় কোনো অভিযোগ উঠেনি। নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। তারা আরও বলেছেন, সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন। ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এমন পরিবেশ ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত বজায় থাকুক এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।


গতকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ভোটের প্রচারের শেষ দিনে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় শপথ পাঠ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রদলের প্যানেল। সেখানে ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছাত্রদলের প্রার্থীরা ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সংগঠনটির প্রার্থীরাও। সব মিলিয়ে ছাত্রদলের ২০৫ জন প্রার্থী আটটি বিষয়ে শপথ নেন। শপথ পাঠ করান ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। ডাকসুতে নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আচরণে গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটানোর শপথ নিয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা। শপথের প্রথম দফায় বলা হয়, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো, ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যে কোনো মূল্যে ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দেয়া হবে না।


এবারের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ দেশের শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের একটাই বড় প্রত্যাশা- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ফেরাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে দেখতে চান।


ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এক নারী প্রার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে। নানারকম সাইবার বুলিং চলছে। তবে যে কোনো অরাজকতা রোধে ট্রাস্কফোর্স গঠন হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও শান্তিপূর্ণ ডাকসু নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। এবারের ডাকসু নির্বাচন আগামীর বাংলাদেশ ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে এক নতুন ধারার রাজনীতি চলছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে আসলেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির বাইরে আলোর পথে আমাদের যাত্রা কতদূর অব্যাহত থাকবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ