Views Bangladesh Logo

নোনাবালুতে জীবিকার ক্ষতি

ক্ষতিপূরণ দিয়েও যে ক্ষতি পোষানো যাবে না

মোংলা বন্দরের ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় পশুর নদ খনন করে উত্তোলন করা বালু আশপাশের ফসলি জমিতে ফেলা হয়, তাতে করে শুধু আবাদি জমির ক্ষতি নয়, ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য প্রকল্পেরও; এসব নিয়ে কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ জারি থাকলেও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মোংলার দক্ষিণ দিকের শেষ জনপদ চিলা ইউনিয়নের জয়মনির ঘোল। এর পরই শুরু সুন্দরবনের। কয়েক বছরে এই জনপদে শত শত মানুষের জীবিকা বদলে গেছে পশুর নদ খনন করে ফেলা বালুর কারণে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নাব্য বজায় রাখতে ২০১১ সালের মার্চে ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং’ নামের খনন প্রকল্প শুরু হয়। খনন করা বালু ও নোনা পলি ফেলা হচ্ছে নদীর পূর্ব তীরের ৭০০ একর কৃষিজমিতে। এখন পর্যন্ত ৩৭৬ একার জমি হুকুম দখল করে ভরাট করা হয়েছে। বাকি ৩২৪ একর জমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়াধীন। এই কাজ চলবে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

সম্প্রতি জয়মনী থেকে চিলাবাজার পর্যন্ত নদী খনন করা বালু ও পলিল টিলা দেখা যায়। জয়মনী, কাটাখালী, কোলাবাড়ী, সিন্দুরতলা, তেলিখালী, আমতলা, কলাতলা, কেয়াবুনিয়া গ্রামে বিশাল বিশাল ডাইক। এগুলোর কোনোটির উচ্চতা ৩০ ফুটের বেশি। আগে এসব নিম্নভূমি থেকে বর্ষকালে জাল টেনে যে মাছ পেতেন স্থানীয় বাসিন্দারা তা দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতেন, এখন পুনার দাম বাড়লেও দিনে ৪০০-৫০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। এ তো গেল একদিক, আরেক দিক হচ্ছে, নদীর তলদেশ থেকে তোলা লবণ মিশ্রিত বালু বৃষ্টিতে ধুয়ে আশপাশে মিশে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দরা বলেন, বালু ফেলার দু-এক বছর আগেও তাদের জমির বাড়িতে নারকেল, সুপারি, কাঁঠালগাছসহ নানা প্রজাতির ফলজ গাছ ছিল। এখন সব মারা যাচ্ছে। এর কারণ, আশপাশে উঁচু বালুর যে টিলা হয়েছে, বৃষ্টি হলেই বালু ধুয়ে লবণ গিয়ে মিছে আশপাশের জমিতেও। ভুক্তভোগীরা বলেন, বালুর টিলা যে-পরিমাণ উঁচু করা হয়েছে তাতে ৩০-৩৫ বছরেও মাটি স্বাভাবিক হবে না।

পরিবেশকর্মীরা বলেন, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষায় (ইআইএর) ভূমিস্তর থেকে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ১০ ফুট পরিমাণ বালুর গড় উচ্চতার কথা বলা হয়েছে। অথচ এখানে বালুর উচ্চতা ২০-৩০ ফুটের ওপরে। পরিবেশবিদদের পরামর্শ, হপার ড্রেজার ব্যবহার করে এসব বালু সমুদ্রে ফেলা যায়। বা অন্য জায়গায় বিক্রি বা বিদেশে রপ্তানি করা যায়।

অথচ তা না করে ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে, মানুষের জীবিকা নষ্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় কাজেই দেখা যায় সুষ্ঠ সমন্বয় নেই। একদিকে ভালো করতে গিয়ে অন্য দিকে খারাপ করে ফেলে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি সঠিক পরিকল্পনার কারণেই যে এটা হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। তাদের কথা তখন কর্ণপাত করেনি প্রকল্পের পরিচালকগণ।

তারা বলছেন, ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে; কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ক্ষতির তুলনায় ক্ষতিপূরণ নামমাত্র। আর ক্ষতিপূরণ দিয়ে বা শক্তি প্রয়োগ করে হয়তো কৃষকের, জেলের, স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখ বন্ধ রাখা যাবে; কিন্তু দেশের যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ