ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৯৪ জন, ‘দুর্ভিক্ষে’ ছয়জন
গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ৯৪ জন ফিলিস্তিনি, যাদের ২৯ জন ত্রাণপ্রার্থী। আহত আরও ৪৩৯ জনকে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া অবরুদ্ধ উপত্যকায় জোরপূর্বক অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন একজন শিশুসহ আরও ছয়জন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ২২ মাসে নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৯৭৩ জনে এবং আরও অন্তত এক লাখ ৫০ হাজার ২৭ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন ১৮১ জন, যাদের ৯৪ জনই শিশু।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে যুদ্ধে ‘সাময়িক বিরতির’ ঘোষণা দিয়েও গাজাজুড়ে বিমান ও ড্রোন হামলা এবং স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবার (৪ আগস্ট) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ৪১ জন ফিলিস্তিনি, যাদের ২০ জন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য এসেছিলেন। অন্য ৫৩ জন নিহত হন রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে রাতভরের হামলায়, যাদের নয়জন ত্রাণপ্রার্থী।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতাল সূত্র জানায়, বোমাবর্ষণ ও বাস্তুচ্যুতিতে গাজার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ তৈরি হওয়ায় ২৪ ঘণ্টায় জরুরি ও বহির্বিভাগীয় বিভাগগুলোতে এসেছেন আহত শত শত মানুষ। তাদের কমপক্ষে ৩৮ জনই মারা গেছেন হাসপাতালে পৌঁছানোর পর। আহত ১৬৬ জনকে আরও চিকিৎসার জন্য ভর্তি ও চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১৩২ জনকে।
আল-আওদা হাসপাতাল সূত্র জানায়, মধ্য গাজার একটি জিএইচএফ সাহায্য কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে সাতজন সাহায্যপ্রার্থী নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।
জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, রাফাহর উপকণ্ঠে আল-শাকুশ পাড়ায় জিএইচএফ সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে একজন নারীসহ দুজন নিহত এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল জানায়, দেইর এল-বালাহতে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন তিনজন। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গাজা সিটির শুজাইয়া পাড়ায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারা যান আরও চারজন।
এদিকে, আল-আকসা টিভি জানিয়েছে, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরে বাসিন্দাদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী আক্রমণ করলে দুজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
আল-আহলি হাসপাতাল সূত্র জানায়, গাজা শহরের পূর্বে শুজাইয়া পাড়ার একাধিক এলাকায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে সাতজন নিহত হয়েছেন।
চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র ঘাটতি, অতিরিক্ত ভিড় ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার সীমিত সুযোগ-সুবিধাসহ তারা চরম চাপের মধ্যে কাজ করছেন। ধ্বংসস্তুপের নিচে বা রাস্তায় আরও অনেকের মরদেহ বা আহতরা আটকা পড়ে আছেন, যেগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা।
অন্যদিকে গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২২ হাজারেরও বেশি মানবিক ত্রাণ ট্রাক অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বাইরে অপেক্ষা করছে। ২৭ জুলাই থেকে ইসরায়েল বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল ও গড়ে ৮৪টি ট্রাক সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০টি ত্রাণ ট্রাক প্রয়োজন। জাতিসংঘ জানায়, গাজায় ১০ লাখ নারী ও মেয়ে ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে।
অন্যদিকে হামাস বলেছে, যদি ইসরায়েল গাজার সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে ‘মানবিক করিডর’ খুলে দেয়, তবে গাজার ইসরায়েলি বন্দির কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটিও (আইসিআরসি) তাদের জন্য উন্মুক্ত।
গত সপ্তাহে হামাসের হাতে বন্দি থাকা দুজন ইসরায়েলির কঙ্কালসার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জেনেভাভিত্তিক রেডক্রসের কাছে গাজার বন্দিদের কাছে জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানোর অনুরোধ জানান। এরপরই হামাসের সামরিক শাখা জানায়, তারা এই অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিতে রাজি, তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে।
গাজায় এখনও প্রায় ৫০ জন বন্দী রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজার বিভিন্ন এলাকায়।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৪০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৮৬ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে