গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও তিনজন সাংবাদিকসহ নিহত ৯৩ ফিলিস্তিনি
গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ আল-কাউইফিসহ আরও তিনজন সাংবাদিক। সাফা সংবাদ সংস্থা ও আল-আকসা টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি কাউইফি যুদ্ধ কাভার করছিলেন। নিহত অন্য দুজন হলেন ফটোগ্রাফার ও সম্প্রচার প্রকৌশলী আইমান হানিয়ে এবং সাংবাদিক ইমান আল-জামিলি।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি উপত্যকাটিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল কমপক্ষে ২৮০ জন সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কেরই ১০ জন। নিহতদের ২৫০ জন সাংবাদিক ও ৩০ জন মিডিয়াকর্মী বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নাসরপাড়ায় একটি আবাসিক ভবনের ছাদে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে বিমান থেকে বোমা হামলাটি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-কুওয়াইফি ছাড়াও সেখানে অন্য একজন ফিলিস্তিনি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু নিউজ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯৩ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭০৩ জন। নিহতদের ৮৬ জনই গাজা সিটিতে মারা গেছেন ইসরায়েলি সেনাদের গোলা ও বোমাবর্ষণে। ফলে গত ২৩ মাসে হামলায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৯৬৪ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬৫ হাজার ৩১২ জন।
এছাড়া ইসরায়েলের অবরোধে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন একজন শিশুসহ আরও ছয়জন। ফলে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৮ জনে, যাদের ১৪৬ জনই শিশু। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাতিসংঘ-সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা (আইপিসি) গত মাসে উত্তর গাজাকে দুর্ভিক্ষ অঞ্চল ঘোষণা করার পর মারা গেছেন ৩১ জন শিশুসহ ১৫০ জন। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ মধ্য ও দক্ষিণ গাজার দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২ মার্চ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়ায় এই অঞ্চলের ২৪ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হতাহতদের মধ্যে ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান ছয়জন এবং আহত হন অন্তত ৯৪ জন। এ নিয়ে ২৭ মে বিতর্কিত জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে নিহত সাহায্যপ্রার্থী দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫০০ জনে, আহত হয়েছেন আরও ১৮ হাজার ২২৯ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় এখনো ৪৮ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের কথা বলেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজাজুড়ে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১২ হাজার ৪১৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৫৮৮ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে