ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে আহত বেড়ে ৮৬ জন
ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও ৭০ জন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটি। এ নিয়ে সংঘাতের দশম দিনে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৮৬ জনে।
দুই দফায় ইসরায়েলের কারমেল ও হাইফা শহর, রাজধানী তেলআবিব এবং উত্তরাঞ্চলে চালানো এসব হামলাকে একদিন আগে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রোববার (২২ জুন) ভোর থেকে এ পর্যন্ত আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর, তিনজন মাঝারি ধরনের, তিনজনের মূল্যায়ন চলছে এবং ৭৬ জন হালকা আঘাত পেয়েছেন। রাজধানী তেলআবিবের ইচিলভ মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন দু’জন শিশু এবং ৩০ বছরের এক যুবক মাঝারি ধরনের আঘাত পেয়েছেন বলে জানায় দেশটির জরুরি সেবা ম্যাগান ডেভিড অ্যাডম (এমডিএম)।
এমডিএম জানায়, হামলার কয়েক ঘণ্টা পরও ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। এখনো বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন জরুরি সেবা কর্মীরা।
হামলায় একটি বৃদ্ধনিবাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা উদ্ধারকাজকে আরও জটিল করে তুলেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘একটি বিশাল বিস্ফোরণ হলো। সব কেঁপে উঠল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি’।
ছবিতেও দেখা গেছে, হামলায় আহত ও আতঙ্কিত মানুষজন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ছোট ব্যাগ হাতে নিয়ে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। নিরাপত্তা বাহিনী আশপাশের ভবন ধসে পড়ার শঙ্কায় সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিচ্ছে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর, একটি জৈবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি কমান্ড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও সহযোগী ঘাঁটির লক্ষ্যবস্তুতে ভোর থেকে মোট ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা।
ইরানি ফার্স সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটির ‘সৎ প্রতিশ্রুতি ৩’ নামে পরিচিত এই অভিযানে শক্তিশালী ওয়ারহেডসহ দূরপাল্লার তরল এবং কঠিন জ্বালানি ক্ষেপণাস্ত্রের মিশ্রণ ব্যবহার করেছে ইরান। যার মধ্যে রয়েছে, নিজেদের তৈরি সর্বাধুনিক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ‘খায়বার-শেকান’, যা আনুষ্ঠানিকভাবে খোররামশাহর-৪ নামে পরিচিত। এটি একাধিক ওয়ারহেড বহন করে দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ভোরে দেশটির দশটি স্থানে দুটি তরঙ্গে ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এর ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রাথমিকভাবে ও পরে অন্য পাঁচটি দ্বিতীয়বারের মতো নিক্ষেপ করে ইরান।
স্থানীয় প্রতিবেদন অনুসারে, হামলার আগেই স্থানীয় সময় সকাল আটটার দিকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। হামলার পর উত্তর ও মধ্য ইসরায়েলের আঘাতস্থলগুলোতে জরুরি চিকিৎসাদল পাঠানো হয়। সকাল আটটা ২০ মিনিটে আশ্রয়স্থলে যাওয়ার নির্দেশটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
বিবৃতিতে এমডিএ জানায়, শেষ কয়েক মিনিটে শোনা যাওয়া সতর্কতামূলক সাইরেনের পর তাদের দলগুলো সেই জায়গাগুলোতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর এখনো ধ্বংসস্তূপে কেউ আটকে রয়েছেন কি না, তা নিশ্চিতে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল আরও জানায়, উত্তর ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর হাইফায় একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আগে থেকে সতর্কীকরণ সাইরেন বাজানো ছাড়াই আঘাত হানে। জেরুজালেমের আকাশেও বিস্ফোরণ দেখা এবং শব্দ শোনা গেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের আকাশে একাধিক প্রজেক্টাইল দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ফুটেজেও আকাশজুড়ে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের সাদা কনট্রিল দেখা গেছে। প্রতিবেশী জর্ডানেও সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানোর কথা জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে