গত ছয় সপ্তাহে গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ৭৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত: জাতিসংঘ
গত ছয় সপ্তাহে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ও ত্রাণ সামগ্রী বহনকারী গাড়ি বহরে হামলা চালানোর সময় অন্তত ৭৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)।
নিহতদের মধ্যে মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত স্থাপনার আশপাশে ৬১৫ জন এবং বাকি ১৮৩ জন ত্রাণ সামগ্রী বহনকারী গাড়ি বহরের কাছে মারা যান।
শুক্রবার (১১ জুলাই) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, “গত ২৭ মে থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত এই এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ আহত ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এখানে নৃশংস অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং খাদ্যসহ জরুরি ত্রাণ সংগ্রহের লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের ওপর আরও নৃশংসতা সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
মে মাসের শেষদিকে ইসরায়েল কর্তৃক ১১ সপ্তাহের ত্রাণ অবরোধ প্রত্যাহার করার পর ত্রাণ বিতরণ শুরু করে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইএফ)। সংস্থাটি ওএইচসিএইচআরের পরিসংখ্যানকে “ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
জিএইএফের এক মুখপাত্র বলেন, “প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলো ঘটেছে জাতিসংঘের ত্রাণ সামাগ্রী গাড়ী বহরের আশপাশে।
সমাধান হলো আরও বেশি ত্রাণ দেয়া যেতো। জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবিক সংস্থা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করলে এই সহিংসতা বন্ধ অথবা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।”
জাতিসংঘের জিএইএফের কার্যক্রমকে “মৌলিকভাবে অনিরাপদ” এবং মানবিক নিরপেক্ষতার পরিপন্থী বলে সমালোচনা করেছে। বিশেষ করে সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে এমন মন্তব্য এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল পরিচালিত জিএইচএফের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র শামদাসানি বলেন, “আমাদের উদ্বেগকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা
সহায়ক নয়—প্রয়োজন হচ্ছে নিরপেক্ষ তদন্ত, যাতে জানা যায় কেন মানুষ ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি নিরাপত্তা ও সরবরাহ সংস্থার সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ করে জিএইচএফ, যা জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার বাইরে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলের অভিযোগ, জাতিসংঘের পদ্ধতির মাধ্যমে হামাস ত্রাণ দখল করছে, যা হামাস অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সাম্প্রতিক হতাহতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং সংঘাত কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বেড়া নির্মাণ, নির্দেশনা বোর্ড স্থাপন, এবং নতুন প্রবেশপথ চালু করা।
ওএইচসিএইচআর জানায়, তাদের তথ্য হাসপাতাল, কবরস্থান, পরিবার, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, এনজিও এবং স্থানীয় অংশীদারদের কাছ থেকে
সংগ্রহ করা হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে