লিবিয়ায় দুই গণকবর থেকে ৪৯ জন অভিবাসী-শরণার্থীর মরদেহ উদ্ধার
লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব মরুভূমির দুটি গণকবর থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মরদেহ ছিল অভিবাসী ও শরণার্থী প্রত্যাশীদের, যারা লিবিয়া হয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়ার নিরাপত্তা অধিদপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, গত শুক্রবার কুফরা শহরের একটি খামারে একটি গণকবর থেকে ১৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো এখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। খবর আল-জাজিরা।
কুফরার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আল-ফাদিল জানান, শহরের একটি বন্দিশিবিরে অভিযান চালানোর সময় আরেকটি গণকবর পাওয়া যায়, যেখানে ৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষ্য অনুযায়ী, এই গণকবরের মধ্যে প্রায় ৭০ জনকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। ওই কবরের অনুসন্ধান এখনও চলছে।
লিবিয়াতে অভিবাসন ও শরণার্থী প্রত্যাশীদের সাহায্যকারী একটি দাতব্য সংস্থা আল-আবরিন জানায়, যে মরদেহগুলো পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। পরে তাদের মাটিচাপা দেয়া হয়।
এ ধরনের গণকবরের ঘটনা লিবিয়াতে নতুন নয়। গত বছর ত্রিপোলির দক্ষিণে শুয়ারিফ এলাকায় একটি গণকবর থেকে অন্তত ৬৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, অভিবাসন ও শরণার্থী প্রত্যাশীরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে পৌঁছানোর অন্যতম একটি পথ লিবিয়া। তবে মানব পাচারকারী চক্রগুলি এই দুর্বল সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। চাদ, নাইজার, সুদান, মিসর, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া—এই ছয়টি দেশের সীমান্তে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্থিতিশীলতা ও পাচারের কারণে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিপদ আরও বাড়ছে।
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের এজেন্সিগুলি লিবিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরছে, যার মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক শ্রম, পেটানো, ধর্ষণ এবং নির্যাতন। এই নিপীড়ন সেখানে গিয়ে আটকা পড়া ব্যাক্তিদের পরিবারগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করার সাথে যুক্ত থাকে, যাতে তারা পাচারকারীদের মুক্তিপণ দিয়ে লিবিয়া ছাড়তে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা লিবিয়ায় গিয়ে আটকা পড়েন এবং পরে ফেরত পাঠানো হয় তাদেরকে লিবিয়া সরকার পরিচালিত আটক কেন্দ্রে রাখা হয়, যেখানে তারা নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অর্থ আদায়ের মতো কঠোর নিপীড়নের শিকার হয়।
২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত একটি আন্দোলনের ফলে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তিনি নিহত হওয়ার পর দেশটি অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়েল। তেলসমৃদ্ধ এই দেশটি গত এক দশক ধরে পূর্ব ও পশ্চিম লিবিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারগুলোর শাসনে রয়েছে। প্রতিটি সরকারকে সহায়তা করছে বিভিন্ন যোদ্ধা গ্রুপ এবং বিদেশি সরকার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে