সংঘাতের সপ্তম দিনে ইসরায়েলে আহত ১৩৭, ইরানে পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত
সংঘাতের সপ্তম দিনে ইরান থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে ছোড়া আরও ৩০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এতে এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ১৩৭ জন ইসরায়েলি। তাদের ১৮ জন জখম হন হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময়।
অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ভোর থেকে চলছে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলা। আন্তর্জাতিকভাবে এসব হামলাকে নতুন উত্তেজনার সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) স্বীকার করেছে, দক্ষিণের বেয়ার শেভা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল, রাজধানী তেলআবিবের কাছের হোলোন শহর আর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের রামাতগন শহর লক্ষ্য করে ইরানের হামলাগুলো ছিল সুপরিকল্পিত ও বহুমুখী। বিশেষত সোরোকা হাসপাতালসহ অন্তত সাতটি স্থান সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের শিকার হয়। তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে তেলআবিব ও জেরুজালেমেও।
দেশটির জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) ও গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। হোলোন শহরে ৪২ জন সামান্য ও তিনজন মাঝারি আঘাত পেলেও গুরুতর আহত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে রয়েছেন, আশির কোঠায় একজন পুরুষ এবং সত্তরের কোঠায় দুজন নারী। রামাতগনে ২০ জন হালকা আঘাত পেয়েছেন। অন্য ৬৯ জন আহত হন সোরোকো হাসপাতালসহ তেলআবিবের আশপাশে।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় থেকে উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত বিমান সতর্কতাও জারি করা হয়েছে।
দেশটির উপ–পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল অভিযোগ করেছেন, ইরান ইচ্ছে করে সোরোকা হাসপাতালকে টার্গেট করেছে। তবে ইরান বলেছে, বেয়ার শেভা তাদের আসল লক্ষ্য ছিল হাসপাতালটির পাশে থাকা সামরিক স্থাপনা। দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রতিপক্ষের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনার ওপর বৃহস্পতিবারের হামলাগুলো হচ্ছে ‘ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর ১৪তম শক্তিশালী সমন্বিত হামলা’।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টেলিগ্রামে জানিয়েছে, সকালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মূল লক্ষ্য ছিল, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কমান্ড ও গোয়েন্দা সদরদপ্তর এবং বেয়ার শেভার গাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্কে অবস্থিত সামরিক গোয়েন্দা শিবির। সামরিক স্থাপনাটি সোরোকা হাসপাতালের ঠিক পাশেই অবস্থিত।
ইরনা জানায়, সামরিক অবকাঠামো ছিল একেবারে নির্ভুল ও প্রত্যক্ষ লক্ষ্যবস্তু। হাসপাতালটিতে কেবলমাত্র আঘাতের তরঙ্গ (শক ওয়েভ) থেকে সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি সংবাদ সংস্থাটির।
অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, দেশটির আরাক ভারী পানি পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাজধানী তেহরানসহ পশ্চিমাঞ্চলে কারাজ শহরের পাশেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল মায়াদেনের বরাতে আল–জাজিরা জানায়, কারাজ শহর এবং এর উপকণ্ঠে শাসকগোষ্ঠীর সামরিক অবকাঠামোগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছাড়াও ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।
এএফপি জানায়, ইরানের দুই গ্রাম- আরাক ও খন্দাবের ‘সামরিক অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর আগেই বাসিন্দাদের সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছিল আইডিএফ। ভোরে টেলিগ্রামে আরবি ও ফারসি ভাষায় জরুরি সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘বাসিন্দা, শ্রমিকসহ পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরটির আশেপাশে অবস্থানরত সবাই যেন অবিলম্বে সরে যান’। তবে রিঅ্যাক্টরে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় কোনো তেজস্ক্রিয় প্রভাব নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে