কিংবদন্তি জহির রায়হানের ৯০তম জন্মবার্ষিকী আজ
আজ ১৯ আগস্ট, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতা, লেখক, সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের ৯০তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালির ইতিহাস, রাজনীতি ও সংগ্রামের গভীর প্রতিচ্ছবি তার চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে ফুটে উঠেছে। কলম ও ক্যামেরাকে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা করেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই তার সাহিত্যিক প্রতিভা প্রকাশ পায়। ১৯৫০-এর দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার লেখা ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘হাজার বছর ধরে’ এবং ‘বরফ গলা নদী’ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।
১৯৬০-এর দশকে তিনি ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ‘বাহানা’, ‘সোনার কাজল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’সহ বেশ কিছু কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার চলচ্চিত্রগুলো জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ, সমাজসচেতন এবং শৈল্পিকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তিনি বাস্তবতাকে ক্যামেরার মাধ্যমে অকুতোভয়ভাবে তুলে ধরার কারিগর ছিলেন।
১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটি পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের প্রতীকী চিত্র হিসেবে নির্মিত হয়। এটি একটি পরিবারের একনায়কতান্ত্রিক আচরণের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের দমননীতি তুলে ধরে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়তে জহির রায়হান নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। এই তথ্যচিত্র বিদেশি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, বাঙালির প্রতিরোধ এবং শরণার্থী সংকটের হৃদয়বিদারক চিত্র ফুটে ওঠে। এই চলচ্চিত্র একটি জাতির আর্তনাদের দলিল হিসেবে আজও বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে জহির রায়হান তার নিখোঁজ ভাই, শহীদ সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্ধানে বের হন। ঢাকার মিরপুরে, যেখানে তখনো রাজাকার ও বিহারিদের নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেখানে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন এবং আর কখনো ফিরে আসেননি।
তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদক এবং ১৯৯২ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করে। এ ছাড়া, চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে তাকে মরণোত্তর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে