Views Bangladesh Logo

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা কেন?

Shameem  Hossen

শামীম হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় রয়েছেন ঢাবি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন। ডাকসু নির্বাচন, বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি, ক্যাম্পাস পুনর্গঠন, গণতন্ত্র, ছাত্র-অধিকারসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন শামীম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভিউজ বাংলাদেশ প্রতিবেদক ফারিজুল ইসলাম

ভিউজ বাংলাদেশ: ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেন দাঁড়িয়েছেন?

শামীম হোসেন: এখানে স্বতন্ত্র বলে কোনো ব্যাপার নেই। কারণ আপনি জানেন, ডাকসু হচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্ররা তো স্বতন্ত্র থাকবেই। আপনি যদি ইমাজিন করেন যে, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো গ্রাম থেকে যেভাবে লোকজন ভাড়া করে নিয়ে ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় শোডাউন দেয় এটা যদি ক্যাম্পাসে কল্পনা করেন তাহলে এটা ক্যাম্পাসের একটা ব্যর্থতা। সুতরাং আমি যেহেতু স্টুডেন্ট ইলেকশন করছি, আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে দাঁড়াব। সে ক্ষেত্রে আমার পাশে যারা থাকবে তারা আমার বন্ধু, তারা আমাকে কিছু সময় দিবে, কেউ হয়তো দিবে না।

আর স্বতন্ত্র মানেই যে একা- এরকম না। এখানে প্যানেল করার তো কোনো প্রয়োজন নেই। আমি তো ন্যাশনাল ইলেকশন করছি না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মনে করি না। প্রত্যেকে সেটাই করে, ফলে এখানে রাজনৈতিক দলগুলো এমপি ক্যান্ডিডেটের মতো পুরো একটি ক্যান্ডিডেট সেটাপ দিয়ে দেয় যে, এখানে আমাদের এ পরিসরটা হবে; কিন্তু আমি এটাকে একাডেমিক ইনস্টিটিউশন মনে করি বা ডাকসুর কাজটা হচ্ছে পড়ালেখার অ্যাকাউন্টেবিলিটি তৈরি করা। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করেছি যে, প্রতিটি পদের জন্য একজন একক ব্যক্তিই তো এখানে আসলে দাঁড়ানোর কথা। ছাত্ররা ব্যক্তিকে ভোট দিবে যে ব্যক্তিকে দিয়ে তারা কাজ করাতে পারে। তিনি বিভিন্ন প্যানেলে থাকতে পারেন, একা থাকতে পারেন। আপনি যদি মনে করেন এই মানুষটি ভালো করতে পারবে তাহলে ভোট দিবেন। তখন দেখা যাবে সবচেয়ে সেরা মানুষগুলো পেয়েছি। প্যানেল দেখে তো ভোট দেয়ার কিছু নেই। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করেছি এককভাবে দাঁড়ানো যায়। আমি যদি ভিপি হই, প্রতিটি ছাত্র কানেকটিভ-কমফোর্ট ফিল করবে। কারণ তারাও আমার মতো শিক্ষার্থী এবং তারা প্রত্যেকে ইন্ডিভিজ্যুয়াল। সুতরাং আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছি, একাই দাঁড়িয়েছি।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনার নির্বাচনে অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্যটা কি?

শামীম হোসেন: আমার নির্বাচনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ মোটামুটি পড়ালেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুতরাং আমরা নানাভাবে পলিটিক্যাল থিওরি অ্যান্ড আদার থিংকস- এগুলো নিয়ে কাজ করি। আমার জায়গা থেকে মনে হয়েছে, আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, দীর্ঘদিন এখানে পড়ালেখা করেছি। যাওয়ার আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন নিয়ে কিছু কাজ করা দরকার। কারণ এখানে যে রাজনৈতিক দলগুলোর ইলেকশন হচ্ছে, দেখবেন অনেকে বলছে- ‘ক্যাম্পাসে নব্বইয়ের হাওয়া বইছে। ‘মানে কী? ডাকসুতে একটা জাদুঘর রয়েছে। অথচ নব্বই সালে যারা জাদুঘর করেছিল তারা ডাকসুকেও এক ধরনের জাদুঘরে পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা ক্ষমতায় আসার পরপরই ডাকসু বন্ধ করে দেয়া হয় এসব বুঝাতে চাইছে? ডাকসু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা আগেও ছিল, এখনও আছে!

এখানে অনেক ছাত্র সংগঠন যারা এখন ডমিনেন্ট তারা ২০০৩/৪/৬ সালে ক্ষমতায় ছিল, তারাই ডাকসু বন্ধ করে রেখেছিল; কিন্তু ডাকসু তো মূলত স্টুডেন্টদের ভয়েস হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া, রাষ্ট্রের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক ধরনের শত্রুতার সম্পর্ক রয়েছে। যতবারই কোনো না কোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করেছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ তৈরির আগে প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

অপরদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলো কম্পারেটিভলি অন্যান্য কেন্টিনের চেয়ে অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ এখানে একটা লিমিটেশন তৈরি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল কর্মী জেনারেশনের একটা জায়গা হিসেবে বিবেচনা করে তারা। যত শোডাউনের কর্মী লাগে, সব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কীভাবে? ধরুন, আমাদের এখানে সিট রয়েছে একটা কিন্তু লাগবে দশজনের। অর্থাৎ ডিমান্ড ক্রাইসিস-লিমিটেশন তৈরি করে। বোঝানো হচ্ছে, যে পলিটিক্স করবে তাকে দেয়া হবে। এই লিমিটেশনটা তৈরি করে কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে জোতচুরি করেছে। প্রতারণা করছে। আমাদের এখানে বন্দি করে ফেলছে যে, তাদের হয়ে যদি কাজ না করি তাহলে আমাদের এসব সমস্যা ঠিক করা হবে না।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি টাকা আসছে রেমিট্যান্স থেকে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কি হাইলি এডুকেটেড? নরমালি লোয়ার এডুকেটেড মানুষরা কষ্ট করে টাকা পাঠায়। তাছাড়া, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ইনকাম আসে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। গার্মেন্টসে কাজ করে কারা? তারাও তো হাইলি এডুকেটেড না। তাদের টাকা দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ছি এবং তাদের সন্তানরা যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার চেষ্টা করে, তাদের জিম্মি করা হচ্ছে। কীভাবে? দেখুন, এখানে শিক্ষকদের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। কর্মচারীদের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে, তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর ভবন রয়েছে। অথচ যাদের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়ছে, যাদের টাকায় পড়ছে, তারা কোনো প্রিভিলাইজ-ই পাচ্ছে না। ছাত্ররা এখানে অনেকটা এনজিও প্রজেক্টের মতো। যেমন গ্রামে যেসব মাইক্রোক্রেডিট আছে, সেখান থেকে লোন নিলাম চার লাখ টাকা সেটা দিয়ে একটা গরু কিনলাম আর বাকিটা অন্য জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে এখানে স্টুডেন্টরা জিম্মি হয়ে আছে। বাকিরা চলতেছে আমাদের দিয়ে; কিন্তু আমাদের জন্য তারা আসলে কিছুই করছে না। আমরা একটা উপলক্ষ মাত্র যে দেখ, আমার ছাত্র আছে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। আমাকে অমুক কোম্পানির সিইও কর। অমুক জায়গায় প্রধান নিয়োগ দাও। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পড়ানোর বাইরে তারা খুবই মনোযোগী কোথায় ভিসি হতে পারে, কোথায় কী হতে পারে এসব নিয়ে। সারা বিশ্বে এটা নাই। এশিয়ায় দেখবেন, একটা সময় সব শিক্ষককে গুরু মানা হতো। অর্থাৎ, এখানে যারা বড় হয়েছেন প্রত্যেকে শিক্ষকের হাত ধরে বড় হয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ওই জায়গা থেকে এক ধরনের ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। কারণ এখানে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রবিরোধী রাজনীতি।

খেয়াল করে দেখুন, আমাদের ক্যাম্পাসে যদি আন্দোলন হয়, সেই আন্দোলন দমনে প্রথম কারা আসে? তারা হচ্ছে ওই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন। অর্থাৎ আমার ওপর প্রথম যে হামলা করবে, সেই হচ্ছে ওদের কোনো ছাত্র সংগঠন যারা এখানে রয়েছে। এটা এক ধরনের প্রক্সি। যেমন রোকেয়া হলে দেখবেন, হবু ক্ষমতাসীন দল যারা ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করে তাদের ছাত্রদল এবং পুলিশ মিলে হলের ভেতরে হামলা করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে আরেকটা মেইনস্ট্রিম ছাত্রসংগঠন যেটা এখন নিষিদ্ধ, তারা হামলা করেছে। ফলে এখানে ছাত্ররাজনীতিতে উন্নয়নের বুলি আওড়ায়, তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো টার্মে ক্ষমতায় ছিল। প্রত্যেকটা ছাত্র সংগঠনের মাদার পার্টি ক্ষমতায় ছিল। তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি করেছে? তারা বলুক যে আমরা মেইনস্ট্রিম পার্টি থেকে আমরা এই জিনিস চেয়ে এনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। হ্যাঁ, কি চেয়ে এনেছে? নব্বইয়ে তারা জাদুঘর চেয়ে এনেছে। তারপর ডাকসুকে জাদুঘরে পাঠিয়েছে। এখন নব্বইয়ের হাওয়া বইছে- এসব বলার মানে কি এরপর আর ডাকসু হবে না? এটাই বুঝাতে চাচ্ছে তারা?

ভিউজ বাংলাদেশ: শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো কীভাবে চিহ্নিত করেছেন?

শামীম হোসেন: সাধারণ এমপি ইলেকশনে কি হয়- রাষ্ট্র থেকে আমরা এনে দিব। কারণ সেখানে বাজেটের একটা ব্যাপার থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে আনা যায়। তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুকেন্দ্রিক নিজস্ব বাজেট রয়েছে। ওই বাজেট দিয়ে আপনি সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। ডাকসু তৈরি করা হয়েছে অ্যাকাউন্টিবিলিটি তৈরির জন্য, স্বচ্ছতার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের দাম ও বুয়েটের খাবারের দাম একই; কিন্তু সবাই ঢাবি থেকে বুয়েটে খেতে যায় ৮০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে। কারণ বুয়েটের খাবার ভালো। তাহলে বুঝেন এখানে সমস্যাটা কোথায়। সমস্যাটা অ্যাকাউন্টিবিলিটিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সবচেয়ে বেশি থাকে অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ অ্যাকাউন্টিবিলিটি। মূল সমস্যা হচ্ছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী সবাই স্বেচ্ছাচারী শুধু ছাত্রদের বলার মতো কিছু নেই। তাদের অ্যাটেন্ডেনস দিতে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ অ্যাটেন্ডেনস ছাড়া তাদের ক্লাসে আনার কোনো উপায় নেই। একটা সময় শুনেছি, একজন শিক্ষক লেকচার দিলে অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা এসে ওই ডিপার্টমেন্টে দাঁড়িয়ে থাকত। আর এখন প্রতিদিন অভিযোগ দেয় যে ভাই, ৬ মাস পরই তো আমার ঘুম আসে। তার মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে অ্যাকাউন্টটেবিলিটি। আপনি যদি মনে করেন, আমি উন্নয়ন করে দিব এটা আসলে সম্ভব না; কিন্তু কাঠামোর ভেতরে সব জিনিসই রয়েছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ যে জায়গা, সেটা হলো টিউটরিয়াল সিস্টেম যেটা অক্সফোর্ড থেকে অনুকরণ করা।

আমরা মাদ্রাসায় যেটা দেখেছি ছোটবেলায়। একজন শিক্ষক সবসময় আমাদের পর্যবেক্ষণ করে যে আমরা পড়ছি কি না। হাউজ টিউটর কিন্তু এ কারণেই রাখা হয়েছে যে, সে প্রতিরাতে গিয়ে একটা একটা কক্ষ চেক করে আসবে ছেলেটা উপস্থিত আছে কি না। রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের অবস্থান কী? পড়ছে কি না, তার কোনো সমস্যা আছে কি না ইত্যাদি। এগুলো চিহ্নিত করতে তাকে রাখা হয়েছে; কিন্তু এখন দেখা যায়, তারা আছেন, কোয়ার্টারে থাকেন, বেতন নেন কিন্তু কাজটা করেন না। ধরুন আপনি পড়া বুঝেন না, একজন স্পেশাল শিক্ষক দেয়া আছে, তার থেকে বুঝে নেবেন, সেটা এখন নাই; কিন্তু এগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ, আমার রিসোর্স আছে বাট ইউটিলাইজ হচ্ছে না। সুতরাং ডাকসুতে স্টুডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ অ্যাকাউন্টটেবিলিটি তৈরি করা, স্বচ্ছতা তৈরি করা এবং প্রশ্ন করা।

ভিউজ বাংলাদেশ: ভিপি নির্বাচিত হলে আপনি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

শামীম হোসেন: আমি যেহেতু ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হব, দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে, ছাত্রদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রয়েছে। অফলাইন-অনলাইনে রয়েছে। বাস্তবেও আমি নিয়মিত ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমি সবসময় থাকি, পড়ালেখা করি আবার এখানে আমার ছাত্রও রয়েছে। ফলে সবার সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে। সেই জায়গা থেকে যখন তারা কোনো একটা বিষয় জানাবে আমিও ডাকসু বডির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে পারব। এখানে আমার একক সিদ্ধান্তই মুখ্য নয়, যেহেতু আমরা পুরো প্যানেলের সঙ্গে কাজ করব। আমি ছাত্রদের ভয়েস হিসেবে কাজ করব সেটা কি রকম? একটা ছাত্রও যদি সঠিক কথা বলে আমাদের কাজ হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো, রাষ্ট্রকে পৌঁছানো।

ভিউজ বাংলাদেশ: নারী শিক্ষার্থীদের সমান অধিকার এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিকল্পনা করছেন?

শামীম হোসেন: অনেক ক্ষেত্রে বলতে পারি, নারীদের প্রধান নিরাপত্তাজনিত সমস্যা কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সড়ক, সেটা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে চলে। এই সড়ক দিয়ে বহিরাগতরা প্রচুর যাতায়াত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা ক্যাম্পাস, যেখানে ছাত্রদের চেয়ে বহিরাগত বেশি। কারণ কী? ১৯২১ থেকে ৪৫০ একর জমি আমাদের নামে লিপিবদ্ধ করা আছে। আমাদের ৭শ’ একর জমি অলিখিতভাবে ছিল। এগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করেছে। যেমন বাংলা একাডেমী, পরমাণু কেন্দ্র। ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর বলেছিল পরমাণু কেন্দ্র সরিয়ে নিবে। সে কারণে আপনি চাইলেই সড়কগুলো বন্ধ করে দিতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের ৫৮ একর জমি দখল করে রেখেছে। পূর্বাচলে আমাদেরই জায়গা রয়েছে। সরকার তো আমাদের জায়গা দখল করতে পারে না। আমরা একটা স্বতন্ত্র বডি। আমাদের জমিগুলো যদি আমরা ফেরত পেতে পারি, আমরা আমাদের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসে রূপান্তর করতে পারব। আমি ভিপি নির্বাচিত হলে পুরো এক বছরের চেষ্টাই থাকবে জমিগুলো উদ্ধার করা। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় আসলে একটা উদ্বাস্তু অবস্থায় আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু এশিয়ার প্রথম পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থাৎ, এখানে শিক্ষকরা ছাত্রদের সঙ্গে খেলা করত। ভালো একটা আবাসিক পরিবেশ এখানে ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। চারপাশের অংশ দখল করে নেয়া হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের প্রস্তাব আছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জায়গা দখল করা আছে, তাদের অন্য জায়গায় ট্রান্সপার করে জায়গা ফেরত আনা। কারণ এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে জড়িত। এখানে যে মডার্ন মুসলিম সোসাইটি তৈরি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার থেকে বড় কিছু হতে পারে না। একটা জাতি চালায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানরা অন্তত ব্যুরোক্রেসির দিক থেকে হলেও চালায়। রাজনৈতিক দিক যদি বলেন, সব নেতাই এখান থেকে হয়েছে এবং নেতা হওয়ার পর ভুলে গিয়েছে।

যা হোক, নিরাপত্তার ইস্যুতে প্রধান কাজ যেটা হতে পারে, সেটা হলো পূর্ণাঙ্গ জমিগুলো উদ্ধার করা। করলে আমরা পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসে রূপান্তর করতে পারব। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মতো ক্যাম্পাস আমরা স্বপ্ন দেখি যদি আমাদের জমি ফেরত দেয়। ফলে আমরা আমাদের সীমানা নির্ধারণ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ একটা আবাসস্থান তৈরি করতে পারব। এটা আমার প্রধান টার্গেট থাকবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ডাকসুকে একটি কার্যকর ও গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে কি কি পরিবর্তন চান?

শামীম হোসেন: প্রথমত ডাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার মানে প্রতি বছর সিনেটের যে অধিবেশন বসে, যদি ডাকসু নির্বাচন না হয় তাহলে সিনেটের অধিবেশন বসবে না। কারণ সিনেটে আমাদের ডাকসুর প্রতিনিধি রয়েছে। সেখানে শুধু শিক্ষক প্রতিনিধি থাকবে, আমাদের প্রতিনিধি থাকবে না- এটা তো হতে পারে না। আমরা এটা অন্তর্ভুক্ত করব, সিনেটের অধিবেশন করার আগে আমাদের এ নির্বাচন হতে হবে। আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সিনেটের অধিবেশন আহ্বান করা যাবে না। সিনেট বন্ধ থাকবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ডাকসু নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষতা পালন করতে পারবে বলে মনে করেন?

শামীম হোসেন: আমরা আশা করছি, আমাদের অফলাইনে বিউটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি ফিরে এসেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে সবগুলো শক্তি একসঙ্গে কাজ করেছে। ফলে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া রয়েছে। বলা হয়েছে, অনলাইন-অফলাইন দুই জায়গায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে; কিন্তু দেখা যায়, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ-গ্রুপ খুলে অন্য প্রার্থীদের নামে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বলে দিয়েছে, অনলাইন-অফলাইনে প্রোপাগান্ডা চালালে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।

এখন প্রায় দেখা যায়, কারা পেজটা চালাচ্ছে, কি নামে, কোন আইপিএস থেকে চালাচ্ছে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেটা হয়, কোনো ছাত্র যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। আমরা প্রশাসনের কাছে এটা আশা করেছিলাম। প্রশাসন দেখি যে, বাকিরা কখন আবেদন করবে এটার জন্য বসে থাকে। এমন যদি হয়, নিজ দায়িত্বে তারা যদি কাজ না করে তাহলে আমরা নিজেরাই ইলেকশন বডি হিসেবে কাজ করছি কি না- বুঝতেছি না। অনলাইনে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারছে না। কারণ শিক্ষার্থী সংসদের দুটি গ্রুপই কোনো না কোনো প্যানেলের অধীনে অলরেডি চলে গিয়েছে। ফলে স্বতন্ত্র যারা ইলেকশন করছে তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাদের নামে শত শত ফেক আইডি থেকে প্রোপাগান্ডা পোস্ট করা হচ্ছে। সুতরাং আমি মনে করি, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

শ্রুতিলিখন: শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ