রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যা বললেন শেখ হাসিনা
৫ আগস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন।
বুধবার রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, গত বছর তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সহিংসতা বা প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারকার্য সম্পন্ন করেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ছাত্র আন্দোলন দমনে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় এসব অভিযোগ আনা হয়। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ওই আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছিলেন, যাদের অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন গোপন বন্দিশালার মাধ্যমে বিরোধীদলীয় কর্মীদের গুম ও নির্যাতনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৩ নভেম্বর।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিচার প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাজানো আদালতের (ক্যাঙ্গারু কোর্ট) আয়োজন, যেখানে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া ছিল। আমাকে আগাম নোটিশ দেয়া হয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ পাইনি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেয়ায় দলটির কোটি কোটি সমর্থক ভোট বর্জন করবেন।’
শেখ হাসিনা জানান, ‘যে সরকার নির্বাচন শেষে গঠিত হবে, যদি সেখানে আমাদের দলকে বাদ দেয়া হয়, আমি সেই সরকারের আমলে দেশে ফিরব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেশে ফিরতে চাই—তবে কেবল তখনই, যখন সেখানে বৈধ সরকার থাকবে, সংবিধান মানা হবে এবং প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে। সরকার জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্যায়, পাশাপাশি আত্মঘাতীও। কোটি কোটি মানুষ আমাদের সমর্থক; তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়।’
নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। এর আগে, জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধাপরাধ তদন্তের কারণ দেখিয়ে ইউনূস সরকার সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের সমর্থকদের অন্য দলকে ভোট দিতে বলিনি। আমরা এখনো আশা করি, শেষ পর্যন্ত বোধবুদ্ধি কাজ করবে এবং আমাদেরও নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হবে।’
তবে তিনি বা তার পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে কোনো গোপন আলোচনার চেষ্টা চলছে কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবারও দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে—সরকারে বা বিরোধী দলে—এবং দলের নেতৃত্ব আমার পরিবারের হাতে থাকা জরুরি নয়।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে