Views Bangladesh Logo

শেখ হাসিনার কোন অপরাধে কী সাজা দিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্র্যাইব্যুনাল।

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার ৬টি অধ্যায়ের ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ‘মিসকেস’থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সর্বোচ্চ শাস্তির অপরাধ করলেও এ মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

অভিযোগগুলো হলো–

প্রথম অভিযোগ: গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ হাসিনার ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়’ তাদের অধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। এরই অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধ করতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় অভিযোগ: শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’ দিয়েছেন। এ ছাড়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত বছরের ১৬ জুলাই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ‘বুক লক্ষ্য করে বিনা উস্কানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে’ তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আসামিরা জ্ঞাতসারে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।

চতুর্থ অভিযোগ: ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শাহরিয়ার খান আনাসসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে। এর মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিরা তাদের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

পঞ্চম অভিযোগ: ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশের এলাকায় গত বছরের ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছয় শিক্ষার্থীকে তৎকালীন সরকারের পুলিশ সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতদেহ ও একজনকে জীবিত এবং গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় হত্যা, নির্যাতন, মৃত ও জীবিত অবস্থায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অমানবিক আচরণ করার অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

এরমধ্যে শেষ তিনটি অভিযোগে আদালত  শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর প্রথম দুই অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। এদিকে চতুর্থ অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ