ভিসার অনুমতি বাতিল, বৃত্তি পেয়েও বাংলাদেশে পড়তে আসা অনিশ্চিত ১৩০ ফিলিস্তিনি ছাত্রীর
চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) থেকে বৃত্তি পাওয়া ১৭১ জন ফিলিস্তিনি ছাত্রী অনিশ্চয়তায় পড়েছেন আগমনী ভিসা (ভিসা অন অ্যারাইভাল) বাতিলের কারণে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত জুনে চট্টগ্রামের পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানায়, ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের দেয়া পূর্বানুমতি বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকার ১৮৯ জন ফিলিস্তিনি ছাত্রীকে আগমনী ভিসা অনুমোদন দিয়েছিল। গাজা থেকে জর্ডান হয়ে এ বছরের মাঝামাঝি চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা ছিল তাদের। কিন্তু অনুমতি বাতিলের কারণে অন্তত ১৩০ জন ছাত্রী ভর্তি হতে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ জন ছাত্রী নিখোঁজ, যাদের সম্পর্কে ধারণা করা হচ্ছে তারা ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর অক্টোবরে ফিলিস্তিনের মেধাবী ছাত্রীদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়ার পর থেকেই একটি মহল তাতে বাধার সৃষ্টি করে। ওই মহল সরকারের নানা পর্যায়ে যোগাযোগ করে ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের বক্তব্য হলো, ফিলিস্তিনের ছাত্রীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতে পারেন। এই যুক্তি তুলে ধরে মহলটি প্রকারান্তরে ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে আসা বন্ধের জন্য সরকারি স্তরে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায়। ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়তে আসা বন্ধের নেপথ্যে ঢাকায় ফিলিস্তিনের দূতাবাস রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে কূটনৈতিক একাধিক সূত্র।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান গণমধ্যমে বলেন, ফিলিস্তিন দূতাবাস বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সে দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য, বিশেষত গাজার শিক্ষার্থীদের জন্য, প্রদত্ত সব ধরনের বৃত্তিকে স্বাগত জানায়। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা দুই শর বেশি বৃত্তি পেয়েছে। এর আওতায় বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতায় তারা গাজা থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউসুফ রামাদান বলেন, ফিলিস্তিন সরকারের নীতি অনুযায়ী, শুধু ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৃত্তিই গ্রহণ করা হয়। ফলে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এই স্বীকৃতি পায়নি, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অনুমতি আমরা দিতে পারি না। বাংলাদেশে অবস্থিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দূতাবাস ফিলিস্তিন সরকারের নীতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জানা গেছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আহমেদ চলতি মাসের শুরুতে ফিলিস্তিন সফর করেন। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন এবং শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষামন্ত্রী আমজাদ বারহামের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় ফিলিস্তিনের দুই মন্ত্রী গাজার ছাত্রীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করায় তাকে ধন্যবাদ জানান।
কামাল আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ৬০০ জনের বেশি আফগান শিক্ষার্থীর আগমনী ভিসার ব্যবস্থা করেছিল। তখন বাংলাদেশ সরকার আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের অনুমতির অপেক্ষা করেনি। সিরিয়া, ইয়েমেনসহ অন্য দেশ থেকেও ছাত্রীরা পড়তে এসেছেন। তাদের ভিসা দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সরকারের অনুমতি নিতে বলা হয়নি। ফিলিস্তিনের বেলায় এমন ব্যতিক্রম কেন?
তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা করতে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে