মারা গেলেন বদরুদ্দীন উমর
প্রখ্যাত চিন্তক, লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং মার্কসবাদী তাত্ত্বিক প্রবীণ রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, ‘সকালে অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনার পর সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। বিস্তারিত আমরা পরে জানাতে পারবো।’
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১০ দিন চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফেরেন গত সপ্তাহে।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্ম বদরুদ্দীন উমরের। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ভারত উপমহাদেশের অন্যতম খ্যাতনামা মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক।
উমর ১৯৪৮ সালে বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে প্রবেশিকা (মাধ্যমিক) ও ১৯৫০ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫০ সালে পরিবারের সাথে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। দর্শন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। ১৯৬১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসফি, পলিটিক্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স (পিপিই) ডিগ্রি লাভ করেন।
সার্বক্ষণিক রাজনীতি ও লেখালেখিতে যুক্ত হওয়ার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ১১ বছরের শিক্ষকতা জীবনেও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
বদরুদ্দীন উমর কর্মজীবনে প্রথমে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রাও শুরু হয় তারই হাত ধরে এবং ১৯৬৮ সালে পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) এর নেতা ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সালের বিশেষ কংগ্রেসের প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশিকালের রাজনৈতিক জীবনে বদরুদ্দিন উমর বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০০৩ সালে নিজের হাতে গড়া জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন।
বাংলা-ইংরেজি ভাষায় শতাধিক মননশীল গ্রন্থ রচনা ছাড়াও ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সাময়িকী ‘সংস্কৃতি’ সম্পাদনা করেছেন তিনি। ষাটের দশকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তার লেখা বইগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনটি বই হচ্ছে- সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯)।
১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৭৪ সালে ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার এবং চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হলেও সব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান বদরুদ্দীন উমর।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে