বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মারা গেছেন
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) মৃত্যুবরণ করেছেন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোররাতে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সখিনা বেগম ছিলেন এক অসাধারণ সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি রাজাকারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে অংশ নেন এবং নিকলীতে পাঁচজন রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার ব্যবহৃত ধারালো দা বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
সখিনার জন্ম কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে। পিতার নাম সোনাফর মিয়া এবং মাতার নাম দুঃখী বিবি। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন এবং স্বামী কিতাব আলী মুক্তিযুদ্ধের আগেই মারা যান। জীবনের শেষ কয়েক দশক তিনি কাটিয়েছেন বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের সঙ্গে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক নাহিদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিয়াজ মামনুন রহমান পুটন বলেন, “বড়মাইপাড়া গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন সখিনা বেগম। ছোটবেলা থেকেই আমরা তার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি শুনেছি। তিনি ছিলেন একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।”
গুরুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোতা মিয়া জানিয়েছেন, সখিনার মরদেহ মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সখিনা বেগম গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর অধীনে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাধুনির দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি রাজাকারদের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে তথ্য সংগ্রহ করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন, তবে কৌশলে পালিয়ে আসেন এবং সেই সময় উদ্ধার করা দা দিয়েই রাজাকারদের প্রতিরোধ করেন।
দেশমাতৃকার জন্য তার এই অসামান্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে