রোহিঙ্গা সংকটে বিশ্বকে পদক্ষেপ নিতে বললেন তোহিদ
পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তোহিদ হোসেন সতর্ক করেছেন যে, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হলে এটি একটি বড় আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকিতে রূপ নিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা ব্যাপক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, আর এখন এটি নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকির জন্ম দিচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক উচ্চপর্যায়ের উন্মুক্ত বিতর্কে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিতর্কের শিরোনাম ছিল: ‘দারিদ্র্য, পশ্চাৎপদতা ও সংঘর্ষের আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব।’
তোহিদ হোসেন জানান, গত আট বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সামরিক শাসনের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী সংকটগুলো প্রায়ই কাঠামোগত বঞ্চনা থেকে উদ্ভূত হয়।’ তাই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নতুন করে মনোযোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
তৌহিদ আরও বলেন,‘এটি শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের বিষয় নয়, বরং আমাদের অঞ্চলে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
বিতর্কে তিনি দারিদ্র্য, পশ্চাৎপদতা ও সংঘর্ষের মধ্যকার আন্তঃসংযোগ এবং এর বৈশ্বিক প্রভাবের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এসব বিষয়ের সমাধান অপরিহার্য, কোন বিকল্প নয়।’
বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরে তোহিদ বলেন, এ দেশের তরুণরা সবসময় ইতিবাচক পরিবর্তনের চালক হিসেবে কাজ করেছে—১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে “মনসুন বিপ্লব” পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ‘যখন তরুণদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তখন এর পরিণাম কী হয় তা আমরা জানি।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান অনেক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ শতাব্দীব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই বৈষম্য দূর করা আমাদের সকলের যৌথ দায়িত্ব।’
বাংলাদেশ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রস্তাবিত ‘তিন শূন্য’ দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং নিট শূন্য কার্বন নির্গমন লক্ষ্যগুলোই দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি।
তিনি জাতিসংঘের তিনটি মূল স্তরের (নিরাপত্তা পরিষদ, ইকোসক ECOSOC এবং শান্তি গঠন কমিশন) মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং মাঠপর্যায়ের উন্নয়নের বাস্তবতার সঙ্গে শান্তি গঠনের কাজকে সংযুক্ত করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূসের প্রবর্তিত ‘সামাজিক ব্যবসার’ রূপান্তরকারী সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
শেষে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তোহিদ হোসেন সকল অংশীজনের সঙ্গে একত্রে কাজ করে একটি আরও ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বিশ্ব গঠনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে