আট টুকরা লাশ: স্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় খুন
গাজীপুরের টঙ্গীতে স্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণে এক যুবককে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ আট টুকরা করা হয়। হত্যাকারীরা পরে টুকরা টুকরা লাশ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানায় র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।
ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনিবার (৯ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এর আগে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার স্টেশন রোড এলাকার হাজীর বিরিয়ানি হোটেলের সামনে থেকে লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন শনিবার বিকালে টঙ্গী বনমালা রোডের এক বাসার টয়লেটের ওপরের কুঠুরি থেকে পলিথিনে মোড়ানো মাথা উদ্ধার করা হয়।
নিহত মো. অলি মিয়া (৩৬) নরসিংদীর করিমপুর এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে। তিনি আজমেরী পরিবহনের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় হকারি করে মালামাল বিক্রি করতেন।
ঘটনার রাতেই অলি মিয়ার স্ত্রী শাহানা আক্তার টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ও র্যাব মিলে তদন্ত শুরু করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন নরসিংদীর করিমপুর গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে আপেল মাহমুদ সাদেক (৪২), তার স্ত্রী শাওন বেগম (৩২), একই এলাকার সাজ্জাদ হোসেন রনি (২৫) ও গাজীপুরের গাছা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার বাপ্পি।
র্যাব জানায়, শনিবার বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই তাদের র্যাব কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। অলি মিয়ার সঙ্গে আপেল, রনি ও শাওনের পরিচয় ছিল। অলি প্রায়ই আপেলের বাসায় যাতায়াত করতেন। এর মধ্যে অলি আপেলের স্ত্রী শাওনের চরিত্র নিয়ে কটূক্তি করেন।
তিনি আরও জানান, কিছু বছর আগে তুচ্ছ ঘটনার কারণে অলি স্থানীয় লোকজন দিয়ে রনিকে মারধর করান। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আপেল ও রনি অলিকে কৌশলে টঙ্গীর বনমালা এলাকার রেললাইনে নিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ট্রেন না আসায় তারা তাকে নিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা অলিকে বিছানায় ফেলে বেল্ট দিয়ে হাত-পা বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য পরদিন বাজার থেকে ছুরি, কালো পলিথিন ও স্কচটেপ কিনে নিয়ে আসে তারা।
লাশ আট খণ্ডে ভাগ করে পলিথিনে মোড়ে টয়লেটের ভিতরে রেখে দেয়া হয়, আর মাথাটি টয়লেটের ছাদে রাখা হয়।
“৭ আগস্ট রাতে তারা রিকশায় করে খণ্ডিত লাশের ব্যাগটি স্টেশন রোডের সড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। পুরো বিষয়টি নজরদারি করেন আপেলের স্ত্রী শাওন,” জানান র্যাব কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, তিনটি সিমকার্ড ও ১৫০ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে