মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলায় টিআইবি’র উদ্বেগ

মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তার এবং শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে অংশ নেওয়া তার সমর্থকদের ওপর সংগঠিত মব-হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, এই ঘটনা দেশের ধর্মীয় সহাবস্থান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর উদ্বেগজনক হুমকির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবি অভিযোগ করেছে, বাউলদের ওপর প্রকাশ্য হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় ছিল এবং সরকারও ঘটনার বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে। সংস্থাটি মন্তব্য করেছে, এই অবস্থান আইনের শাসন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকারকে পদদলিত করছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই ঘটনা একক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা উচিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, “এ ধরনের হামলা একটি সুসংগঠিত কৌশলের অংশ। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, লোকঐতিহ্য, আধ্যাত্মিক চর্চা এবং সংখ্যালঘু বিশ্বাসের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর এই প্রবণতা আরও বাড়েছে।”
তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকায় মাজার ভাঙচুর, কবর থেকে মৃত পীরের দেহ উত্তোলন, বাউল আসর বন্ধ, বাদ্যযন্ত্র জব্দ, নাটক ও গ্রামীণ মেলা বন্ধসহ নানা ঘটনা নিয়মিত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের চাপে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ বাতিলকেও রাষ্ট্রীয় ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার সময় পুলিশ দৃশ্যত অনাগ্রহী ছিল। এ ধরনের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা গোষ্ঠীগত সহিংসতার অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন হিসেবে ব্যাখ্যা হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। সংস্থাটি আরও অভিযোগ করেছে, এসব ঘটনায় শিল্পী ও লোকায়ত সাংস্কৃতিক চর্চাকারীরা ভীত হয়ে আত্মগোপনে যাচ্ছেন, আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও সাংস্কৃতিক চর্চার স্বাধীনতা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন।
টিআইবির মতে, শুধু মানিকগঞ্জ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত উত্তেজনাকর কর্মকাণ্ডও ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণের উদাহরণ। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বলেন, “রাষ্ট্র যখন একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, অথচ প্রকাশ্য সহিংসতার বিরুদ্ধেই নীরব থাকে, তখন প্রশ্ন জাগে—রাষ্ট্র ভীত, অপারগ, না পরিকল্পিতভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে।”
টিআইবি মব-হিংসা, ধর্মীয় উসকানি এবং সাংস্কৃতিক দমননীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যথায় সংস্থার মতে, ‘নতুন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মানবাধিকার, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে