Views Bangladesh Logo

অসমাপ্ত আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধুরই লেখা

Abul Quasem  Fazlul Huq

আবুল কাসেম ফজলুল হকএর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার

বুল কাসেম ফজলুল হক। বাংলা ভাষার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।

ভিউজ বাংলাদেশ: রাজনীতিতে এক পক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগ সহজে আর ফিরতে পারবে না; অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, অচিরেই ফিরবে তারা, তাদের যুক্তি আওয়ামী লীগ এ দেশের জন্মের ও শেকড়ের দল- আপনার ব্যাখ্যা কী?

আবুল কাশেম ফজলুল হক: আওয়ামী লীগ কীভাবে কাজ করে তার ওপরে নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ ফিরবে কি ফিরবে না। এটা ঠিক আওয়ামী লীগ খুব দুরাবস্থায় পড়ে গেছে। যে নেতাদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে তাদের দিয়ে দল হবে না। যাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, তারা যদি নেতৃত্বে আসে তাহলে তাদের অবস্থান ধীরে ধীরে তৈরি হবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে- এ বিষয়ে কি বলবেন?

আবুল কাশেম ফজলুল হক: বাস্তবে যা দেখা যাচ্ছে, সেরকম। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ইউনূস সরকার যেসব বিধিবিধান আইনকানুন জারি করেছে, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই সংগতিপূর্ণ নয়। তবে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যে অবস্থান  মনে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, এটা থাকবে না।

ভিউজ বাংলাদেশ: আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধ কি একে অপরের পরিপূরক?

আবুল কাশেম ফজলুল হক: পরিপূরকই মনে করা উচিত। পাশাপাশি অন্য যারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেনি অথবা পরবর্তীতে যারা মনে করেছে যে, আমাদের ভুল ছিল তারাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলে আওয়ামী লীগ ইলেকশনে জিতে, মুক্তিযোদ্ধারাও সুযোগ সুবিধা পায়, যেটা বিএনপি বা জামায়াতসহ আরও অনেক দল আছে, তাদের থেকে পায় না।

ভিউজ বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে বাংলাদেশবিরোধী একটা শক্তি আছে এমন মন্তব্য অনেকে করেছেন, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আবুল কাশেম ফজলুল হক: শেখ হাসিনা যেসব বিবৃতি দিচ্ছে, এদেরকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) বাংলাদেশবিরোধী, রাজাকার বলেছে, সেগুলো গ্রহনযোগ্য নয়। তবে আমি মনে করি এ সরকার আওয়ামী লীগবিরোধী। কদিন আগে দেখলাম, কূটনৈতিক মিশনে বা সরকারি এ কোনো অফিসে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানো যাবে না। নিজেদের বুদ্ধি আর আমেরিকার বুদ্ধি যুক্ত করে এ সরকারের সিদ্ধান্তগুলো হয়।

ভিউজ বাংলাদেশ: তার মানে এ সরকারে আমেরিকার প্রভাব আছে?


আবুল কাসেম ফজলুল হক: প্রভাব আছে মানে কি? আমেরিকাই তো এ সরকারকে আনছে। কেউ এটার প্রমাণ দিতে পারবে না। নানা ঘটনা দেখে বুঝতে হবে। বদিউল আলম মজুমদার, তিনি তো আমেরিকান ধারার একজন লোক। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না, যারা এটা জানে-বুঝে। বদিউল আলম টাকাটা পায় কোথায়? বিরাট অঙ্কের টাকা সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন থেকে নেয়। আমি জানি না, হয়ত বিশ্বব্যাংক থেকে নেয় না হয় আইএমএফ থেকে।

পতনের কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই আন্দোলন জামায়াত-বিএনপির কাজ। তারা সরকারকে উৎখাত করতে চায়; কিন্তু পদত্যাগের আগে তিনি পুনরায় বলেছিলেন, জামায়াত-বিএনপি এ আন্দোলন করেনি, আমি ভুল বলেছিলাম। আসলে আমাদের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ কথাটা তিনি সাহসের সঙ্গে বলেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। এই যে রেহমান সোবহান সাহেব, তারা আমেরিকার সঙ্গে এ সরকারের কাজ করার একটা কর্মনীতি তৈরি করে দেয়। যেটাতে আমেরিকার-বাংলাদেশ দু’পক্ষেরই স্বার্থ থাকে।

এনজিও এবং সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন টাকাটা পায় কোত্থেকে? এসব থেকে বুঝা যায় আমেরিকার কর্মকাণ্ড। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষমতা এই ইউনূস সাহেবের উপদেষ্টা পরিষদ সম্পূর্ণ রাখে না; কিছুটা রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেগুলো চায় এ সরকারের কাছে সেগুলো মেনে চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো শুধু যুদ্ধ করে না। দেশকে তাদের আয়ত্তে রাখে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নাকি শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা নয়?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে, বঙ্গবন্ধু চেয়ার নাম দিয়ে একজন অধ্যাপককে নিয়োগ করা হয়েছিল। নামটা মনে পড়ছে না। তিনি দুবছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে আরও চার-পাঁচ বছর ছিলেন। তার কাজ ছিল অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা ঠিকঠাক করা, পরিচর্যা, পরিমার্জন ও সুসম্পাদনা করা। তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে টেক্সটা তৈরি করলেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের কিছু বুদ্ধিজীবী এটা রিভাইস করেছেন। আমি নিজেও কিনে এনেছি, পড়ে মনে হয়েছে এটা শেখ সাহেবেরই লেখা। বানান কিছু ভুল থাকতে পারে, এগুলো হয়তো এরা সংশোধন করেছেন; কিন্তু আমি মনে করি, এটা বঙ্গবন্ধুরই লেখা।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধু লেখেননি এটা আমার কাছে একদম বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বা ‘কারাগারে রোজনামচা’ এগুলোও উনারই লেখা। আমার ধারণা শেখ সাহেব বাংলা অনেক ভালো বুঝতেন; কিন্তু লেখালেখির অভ্যাস না থাকায় বাক্য বানানে ভুল থাকতে পারে। নানাভাবে নানা পরিমার্জিন করে বের করা হয়েছে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া নিয়ে কি কোনো সংশয় আছে?

আবুল কাশেম ফজলুল হক: দেখা তো যাচ্ছে নির্বাচন হবে। ফেব্রুয়ারি বা মার্চে নির্বাচন হবে বলে আমার ধারণা হয় এখন; কিন্তু ইউনূস সাহেব এগিয়ে বলছেন না। অবস্থার চাপে নির্বাচনের কথা বলছেন। নির্বাচন একেবারেই করবে না এটা মনে হয় না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ