প্রকৃতিকথা
ধামরাইয়ের রথযাত্রা ও আষাঢ়ের প্রকৃতি
আষাঢ় মানেই কদম ফুল, আষাঢ় মানেই বৃষ্টি, রথযাত্রার উৎসব। বাংলাদেশে এ এক চমৎকার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। তেরই আষাঢ় সকালে এক পশলা বৃষ্টি নামল। ছিটেফোঁটা সে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লাম ধানমন্ডি থেকে ধামরাই। আকাশটাও মেঘলা হয়ে রইল। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রথের দিন বৃষ্টি নামে রথের রশির টানে টানে। এক এক জায়গায় তো রথের রশি টানা হয় এক এক সময়। তার মানে কি সেসব জায়গায় স্থানীয়ভাবে বৃষ্টি ঝরে? তা হয়তো না; কিন্তু আষাঢ়ে বৃষ্টির স্বভাবটাই এমন। একটানা অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি থাকে না। এই আসে এই যায়।
ধামরাই যেতে যেতে আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল, বৃষ্টি হয়েছিল ধানমন্ডিতে, ধামরাই এসে কোনো বৃষ্টি পেলাম না। সারাটা দিন কাটিয়ে দিলাম ধামরাইয়ের প্রকৃতির পল্লীরূপ দর্শনে আর রথের মেলায়। বেলা সাড়ে ১১টায় রথের মেলায় পৌঁছে শুনলাম, রথের টান হবে সন্ধ্যে পাঁচটা বা ছটায়; কিন্তু রথখোলা আর বাজারজুড়ে, এমনকি রাস্তার ধারেও বসেছে নানা রকমের পণ্যের মেলা, কয়েকশ দোকান, মেলায় তারা থাকবে এক মাস। মেলায় কাঠের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে মুড়িমুড়কির ও মিষ্টির দোকান, খেলনা ও সার্কাস খেলা- কি নেই সেখানে?
রথযাত্রা উপলক্ষে এই এক মাস ধামরাই থাকবে এক অন্যরকমের আনন্দে, মানুষ ও উৎসবের আমেজে। রথখোলায় শোভা পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সুদর্শন রথখানা। নানা রঙে, ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। পেছনে যশোমাধবের মন্দির ও অনুষ্ঠান মঞ্চ। সমস্ত রাস্তাজুড়ে মানুষ ভর্তি। রাস্তার মাঝে মাঝে বসেছে কলা-চিনি পসারিরা। হাঁকডাক ছাড়ছেন কলা-চিনি (কেউবা বলছেন চিনি-কলা) বলে। রথের দিনের প্রথম রীতি হলো যশোমাধবের প্রথম দর্শনেই তাকে কলা ও চিনি অর্ঘ্য নিবেদন করে প্রণাম জানানো। যথারীতি মাত্র দশ টাকায় তা সহজে পেয়ে গেলাম। নিবেদনের পর প্রসাদও পেলাম। ছোট ছোট দলে কয়েকজন মিলে নানা রঙে নানা ঢংয়ে নেচে গেয়ে রথের শোভাযাত্রায় আনন্দ প্রকাশ করছেন। দেখলাম, একটা দলে পাঁচ-ছয়জন মিলে শিব সেজে ধর্মীয় গান গাইছেন। শত শত মানুষ তাদের ঘিরে ওদের গান শুনছেন।
সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ধামরাই রথের মেলা শুরু হয়েছিল ১০৭৯ বাংলা সালে। এখনো প্রতি বছর আষাঢ় মাসে মাসব্যাপী চলে সে রথের মেলা। আনুষ্ঠানিকতা দশ দিন। প্রতি বছর যশোমাধব দেবের বিগ্রহকে রথে উঠিয়ে টেনে আনা হয় রথখোলায় এবং দশ দিন পর দশমীতে সে রথ আবার টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে বলে উল্টোরথ। ধামরাইয়ের রথখোলা সংলগ্ন মাধব মন্দির হিন্দুদের একটি অন্যতম প্রধান ও প্রাচীন তীর্থকেন্দ্র।
কথিত আছে যে পাল বংশের শেষ রাজা যশোপাল একদিন ঢাকা থেকে হাতিতে চড়ে ধামরাইয়ের শিমুলিয়ায় বেড়াতে আসেন। সে সময় তিনি একটি লাল মাটির ঢিবি দেখতে পান। ঢিবিটি খনন করে একটি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। মন্দিরের ভেতর মাধব বিগ্রহসহ আরও কিছু বিগ্রহ পাওয়া যায়। মাধবসহ অন্যান্য বিগ্রহ রাজা যশোপাল শিমুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে পূজার জন্য স্থাপন করেন। মাধব বিগ্রহ ধামরাইয়ের মাধববাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজার নাম ওই বিগ্রহের সঙ্গে জুড়ে যশোমাধব করা হয়। এরপর বাংলা ১০৭৯ থেকে ১২০৪ সাল পর্যন্ত চলে রথের মেলা। তৎকালীন যশোমাধবের মন্দির ছিল কুঁড়েঘর আর রথ ছিল বাঁশ নির্মিত। শতাধিক বছর আগে সেখানে পাকা দালান তৈরি হয়। তবে ঠিক কবে কাঠের রথ নির্মিত হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।
শোনা যায় ২৫০ জন কাঠ শিল্পী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ধামরাইয়ের বিস্ময়কর কাঠের রথটি তৈরি করেছিলেন। সে কাঠের রথের গায়ে খোদিত ছিল মহাভারতের গল্প। চূড়াসহ রথটির উচ্চতা ছিল আশি ফুট, দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ছিল ৪৫ ফুট। রথটি ৩২ চাকার ওপর দাঁড় করানো ছিল। তিন তলাবিশিষ্ট সে রথে নয়টি কক্ষ ছিল। তাই সে রথের নাম ছিল নবরত্ন রথ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা সেই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রথটিকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। এরপর আর একটি রথ তৈরি করা হয় যার উচ্চতা ৩০ ফুট। বর্তমানে সে রথই টানা হয়।
কিন্তু রথের টানের অপেক্ষা তো আরও ঘণ্টা পাঁচ-ছয়ের। কি করা যায়? অগত্যা ধামরাইয়ের কোনো একটা পল্লীর প্রকৃতি দর্শন করা যেতে পারে। রথখোলা থেকে বেরিয়ে একটা যন্ত্রচালিত রিকশা নিয়ে চলে গেলাম কুল্লা ইউনিয়নের সীতি গ্রামে। ওখানে একটা পার্কের খবর দিলেন ধামরাইয়ের বন্ধু রাতুল। ঢুলিভিটা থেকে রাস্তা পার হয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার যেতে হলো পার্কটাকে দেখতে। যাওয়ার পথে রাস্তার দুধারে দেখে নিচ্ছি ধামরাইয়ের প্রকৃতি। আষাঢ় মাস হলেও রাস্তার দুপাশে থাকা বিলগুলো জলশূন্য ও ফসলশূন্য। ধান কাটা হয়েছে সারা, সে ফসলের ঝরে পড়া ধানের গাছ গজিয়ে সারাটা বিল সবুজ করে রেখেছে। মাঝে মাঝে পাট, মেস্তা ও ভুট্টা ক্ষেত। রাস্তার ধারে সারি করে লাগানো মেহগনি, আকাশমণি, নিম, কদমের গাছ। রাস্তা থেকে বিলের জমি বেশ নিচু। মাঝে মাঝে উঁচু করে বানানো মুরগির খামারগুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, কিছুদিনের মধ্যেই বিলে জল আসবে।
দিগন্ত বিস্তৃত ফাঁকা মাঠের মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে কিছু উঁচু আর ঝাকড়া মাথার হিজল গাছ। রাস্তায় যেতে যেতে কয়েকটা কালভার্ট পার হতে হলো। কালভার্টের নিচে নালা বা খাল। জল খুবই কম, হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া বৃষ্টির কারণে তাতে অল্প জল জমেছে। সেগুলোর পাড় ধরে হিজল গাছের সারি। হিজলের ডালগুলোর মাথা থেকে চিকন সুতোর মতো ফুলের মঞ্জরিতে এখনো ফুটছে অল্পস্বল্প লাল রঙের হিজল ফুল, সঙ্গে ফুলগুলোকে সঙ্গ দিচ্ছে হাওয়ায় দোলা কচি ফলেরা। অনেকটা হরীতকীর মতো সবুজ ফলগুলো ধীরে ধীরে সেসব গাছ বড় হচ্ছে। খালের ওপর জমে আছে কচুরিপানার ধাপ ও কেশরদাম লতা, হেলেঞ্চারাও চেপে ধরেছে।
মাঝে মধ্যে খালের কিনারে ঝোপ ধরে দাঁড়িয়ে আছে হোগলা পাটির গাছ। কোনো কোনো গাছে লম্বা কাঠির মতো কাঠির মাথায় রুটি বানানো বেলনার মতো সরু পুষ্পদণ্ড শোভা পাচ্ছে। চকলেট রঙের সেসব পুষ্পমঞ্জরিতে তুলোর মতো ফুল ফুটেছে। রাস্তার কোল ধরে পিটালী গাছ, অসংখ্য গোল গোল পুষ্ট ফল ঝুলছে ডালগুলোয়। এর অন্য নাম মেড্ডা। ফলগুলো গ্লোবাকার, হালকা নস্যি বা ম্লান সোনালি। ছোটবেলায় এ ফলের মধ্যে টুথপিকের মতো কাঠি ঢুকিয়ে তা দিয়ে লাটিমের মতো ঘুরাতাম। অকম্মা গাছ হিসেবে এর কোনো কদর নেই; কিন্তু তার কাছে থাকা ছিটকি ও বরুন গাছের এক সময় বেশ ভালো কদর ছিল। বরুন গাছের পাতা দিয়ে আম পাকানো হতো। বরুন গাছে এখন ডিমের মতো ফল ঝুলছে।
অনেক গাছের উপরে উঠে গেছে তেলাকুচা লতা। সাদা ফুলগুলোকে দেখাচ্ছে তারার মতো। ফাঁকে ফাঁকে লতায় ঝুলছে পটলের মতো লাল টুকটুকে ফল। আসাম লতারা বৃষ্টির জল পেয়ে লকলকিয়ে বেড়ে চলেছে। কিনারা খাঁজকাটা পানের মতো পাতাগুলোয় যেন যাদু আছে। হঠাৎ কোথাও সামান্য কেটে গেলে সেখানে এই আসাম লতাপাতার রস লেপ দিয়ে রাখলে কাটা জায়গা জোড়া লেগে যায়, রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। এর অন্য নাম জার্মানি লতা। আর একটি লতা চোখে পড়ছে যেতে যেতে, তার নাম গোয়ালি লতা। তার পাতাগুলো বেশ বড়। রাস্তার ধারের ঢাল ধরে ছেয়ে আছে কানাইবাঁশি ও কানশিরা ঘাস, সেই সঙ্গে বেয়াড়া বাড় বেড়েছে সিঙ্গাপুর ডেইজি লতার। দু-একটা হলদে তারার মতো ফুল ফুটেছে, করাতের মতো খাঁজকাটা সবুজ পাতা, ঘন ও বেশ আঁটোসাঁটো হয়ে অন্য সব বিরুৎ ও ঘাসগুলো চেপে ধরেছে। কয়েক বছর আগেও এই নচ্ছার আগাছাকে শুধু পার্কে বা বাগানে দেখেছি। এত দেখিনি কখনো। এর ফুল ফোটে বসন্ত-গ্রীষ্মে। আষাঢ়েও দু-একটা ফুল চোখে পড়ল। মনে হচ্ছে এই বিদেশি আপদ আমাদের কাছে তার আগ্রাসী আচরণকে আর লুকাতে পারছে না। এ গাছের বাংলা নাম দেয়া হয়েছে কেসুরিয়া।
সেই সঙ্গে আরও একটা অবাক ব্যাপার চোখে পড়ল। একটা চমৎকার চেহারার লালচে-কমলা পোকাকে দেখলাম, কেসুরিয়ার সবুজ পাতা ফুটো করে খাচ্ছে। এ পোকাকে জীবনে কখনো দেখিনি। তাহলে কি কেসুরিয়া এদেশে শুধু নিজে আসেনি, এ পোকাকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। পোকাটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করার পর জানা গেল ওর নাম স্পাইন লিফ রোলার উইভিল, বাংলায় পাতা মোড়ানো কাঁটা কেড়ি পোকা। দূর্বা, চাপড়া, মুধা, অংগুলি, কাকপায়া ঘাসেরা যেন কেসুরিয়ার কাছে হেরে গেছে। ছোট্ট নীলচে বেগুনি ফুলের বেগুনি হুরহুরে, হলদে হুরহুরে, কাঁটানটে, কেশুটি, ফোস্কাবেগুন, ত্রিধারা, বনধনে ইত্যাদি আগাছা কেসুরিয়ার চাপে পিষ্ট। মনে হচ্ছে এই বিদেশি গাছ আমাদের দেশি অনেক গাছের বিলোপ ঘটাবে। যেমনটা করছে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস। এসব আগ্রাসী গাছের ব্যাপক আগ্রাসন বন্ধ করা দরকার।
একটা বাবুই তুলসি গাছ বেশ ঝোপ করে কেসুরিয়াকে ডিঙিয়ে তার বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। সেই বড় বড় পাতার বহুবর্সজীবী বাবুই তুলসি গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়েছে অনেক আগেই, এখনো কয়েকটা ফুলের রেশ রয়ে গেছে লম্বা ডাটির পুষ্পমঞ্জরির মাথায়। তকতকে সবুজ ডগায় পাতার আড়ালে বাসা বেঁধেছে থুতু পোকা ও জাল বিছিয়েছে মাকড়সারা। মাথা উঁচিয়ে কয়েকটা ডালাপালায় ফুল ফোটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কালকাসুন্দা গাছেরা। মাঠের মধ্যে কয়েকটা ক্ষুদি ওকরা গাছে ডালের মাথায় সবুজ গুটি গুটি ফল ধরেছে। বিলের স্যাঁতসেঁতে মাটিতে জন্মেছে ঘাগড়া, সাঁচি, বিষকাটালি, মেচ্চুয়া ও ফোস্কা বেগুনের গাছ। সীতি গ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে কদম গাছ। গ্রামের পথের ধারে একটা সোমত্থ কদম গাছের ডালপালা ভরে হলদে-সাদা সুগোল বলের মতো অজস্র ফুল ফুটে গাছটাকে আলো করে ফেলেছে।
ফিরে এলাম আবার রথখোলায়। তখনো রথের টান শুরু হতে ঘণ্টা দুয়েক বাকি। অগত্যা কি আর করা? যশোমাধব মন্দির থেকে মাওনা-ঢুলিভিটা রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজ পেরিয়ে চলে গেলাম শরীফবাগের দিকে। বংশী নদীর পাড় ধরে গাছের ছায়ায় ইট-বিছানো পথটা মন্দ না। ছায়াময় করে ফেলেছে অনেক গাছপালা ও ঝোপঝাড়। ডোবার মধ্যে একটা হিজল গাছ প্রাণপণ সংগ্রাম করছে বেঁচে থাকার। অজগর সাপের মতো কয়েকটা অশ্বত্থ মূল তাকে অষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরেছে, ডালপালার ওপর জন্মেছে গেছো ফার্ন। গোড়ার ডোবার মধ্যে জন্মেছে বুনো কচুর ঝোপ। প্রচুর ভাঁটফুলের গাছ, ফুল-ফল শূন্য। পিপুল, বিষ কচু ও কালো কচুও আছে পাশের বাঁশঝাড়ে। ফাঁকে ফাঁকে খোলা জায়গায়, ঘাসের সঙ্গে লড়াই করছে বেগুন আর ধুন্দুলের গাছ। ধুন্দুলের গাছে বাচ্চা ফোটাচ্ছে বাদামি গান্ধি পোকা, বেগুনের পাতা খেয়ে বাঁচছে কাটালে পোকারা। বাঁশঝাড়ে বসে উঁকি দিয়ে একটা লালপুচ্ছ বুলবুলি পাখি। খাবে বলে পাখিটা হয়তো খুঁজছে কচি বেগুন ফল। সবাই বাঁচতে চায়। জীবনের এ এক অনিবার্য সত্য, ডারউইনের সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট সূত্র সবলরাই কেবল বাঁচবে, দুর্বলরা মরে যাবে বা সবলদের জায়গা করে দিতে সরে যাবে।
আষাঢ়ে এমন রৌদ্রময় দিন মানায় না। মাঝে মাঝে জলভরা ধূসর-কালো মেঘ ভাসছে আকাশে, বৃষ্টি না ঝরিয়েই হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে। পরক্ষণেই বেরিয়ে আসছে সাদা তুলোর মতো নরম মেঘ। নীল আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা- তার ছায়া পড়েছে বংশী নদীর জলে। আষাঢ়েই কি শরতের আভাস? এবার অবশ্য বর্ষাটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু আগেই এসেছে। সে কারণেও এবার আষাঢ়ের আচরণটা একটু অন্যরকম হতে পারে; কিন্তু আষাঢ়ে বৃষ্টি দরকার, ঝুম বৃষ্টি। না হলে মাটি ভিজবে না, পুকুর-ডোবা জলে ভরবে না। আমন ধান আর মাছ- দুটোই যে বাঙালির পাতে দরকার। ভাত-মাছের জন্যই দরকার বৃষ্টি। চাই ১৯২৭ সালে লেখা কবি সুনির্মল বসুর ‘আবার সুরু ঝুরু ঝুরু বাদল-ঝরা গান’ কবিতার মতো আষাঢ় মাস ও বৃষ্টিকে-
‘আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল-ঝরা গান-
আগুন হানা থামলো এবার
ঠান্ডা হলো প্রাণ।
মেঘ জমেছে নীল আকাশে,
সোঁদা মাটির গন্ধ আসে,
পুকুর-ডোবায় জল থৈ থৈ
ছুটলো গাঙে বান,
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল-ঝরা গান।’
মৃত্যুঞ্জয় রায়: প্রকৃতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে