Views Bangladesh Logo

নারীদের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বৈষম্য

ত সপ্তাহে ক্রীড়াঙ্গনে ‘জেন্ডার বৈষম্য’ শিরোনামে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আমাকেও কিছু বলতে হয়েছে। আলোচনা অনুষ্ঠানে যেটি উঠে এসেছে ক্রীড়াঙ্গনে নারী খেলোয়াড় এবং সংগঠকদের প্রতি অবিচার, বৈষম্য অবহেলা তো কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। নারীদের সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার সীমাবদ্ধ হচ্ছে। ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে নারীরা এখনো সমাজের চোখ রাঙানোর শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজ বুঝতে পারছে দেশে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও সমান অধিকার আছে ক্রীড়াচর্চায় অংশ নেওয়ার। অধিকার আছে দেশকে ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করার। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন খেলায় সব সময় পুরুষদের প্রাধান্য এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের জয় জয়কার।

ক্রীড়াঙ্গনে কুট এবং নোংরা রাজনীতি করেন একদল পুরুষ সংগঠক আর এটা তাদের ব্যক্তি এবং সমষ্টির স্বার্থে। অস্বীকার করার উপায় নেই এই ক্ষেত্রে আবার বেশকিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে যেখানে নারীরা হিংসা এবং বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পুরুষদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নারী খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদ এবং সংগঠকদের ক্ষতি করেছেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন নারী সংগঠক বলেছেন, জুডো ফেডারেশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কামরুল নাহার হিরু, যিনি শুধু স্বনামধন্য জুডোকা নন বছরের পর বছর ধরে এশিয়ান জুডো অর্গানাইজেশনে সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন- তাকে চলমান পরিবর্তনের হাওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে, অথচ এই নারী সংগঠক তার নির্বাচিত সময়ের এক টার্মও পার হয়নি।

তাকে সরানোর পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছেন একজন প্রাক্তন নারী জুডোকা এবং সংগঠক। নারীরা নারীদের বিরোধিতা করছেন- এটি দুঃখজনক। ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অশুভ সংকেত। আমরা চাইছি ক্রীড়াঙ্গন থেকে সব ধরনের অসংগতি দূর হোক। ক্রীড়াঙ্গন হোক সমতার। নারী এবং পুরুষ যদি সমানভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয় তা হলেই দেশের ক্রীড়াঙ্গন সমৃদ্ধ হতে সময় লাগবে না। একজন নারী ক্রীড়াবিদ তার বক্তব্যে জানিয়েছেন গত মার্চ মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন দুদিনব্যাপী ‘জেন্ডার ইকোয়াটি অ্যান্ড উম্যান্স লিডারশিপ’ শিরোনামে কর্মশালার আয়োজন করেছিল। ২৪টি অলিম্পিক ফেডারেশন থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী সংগঠক এবং খেলোয়াড়রা এতে অংশ নিয়েছেন। উদ্দেশ্যটা ভালো ক্রীড়াঙ্গনে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।

কথা হলো বাস্তবে বিষয়টি কেমন আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে। আসল বাধা-বিপত্তি কোথায়? সেটি দূর করতে হলে কি করতে হবে? আর এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? তিনি আরও বলেছেন, এই কর্মশালায় ‘জেন্ডার ইকোয়াটি অ্যান্ড উম্যান্স চ্যালেঞ্জস ইন স্পোর্টস’, ‘উম্যান্স লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট ইন স্পোর্টসসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার কথা হলো আমরা চাচ্ছি সত্যিকার অর্থে ক্রীড়াঙ্গনে নারী খেলোয়াড় ও ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রটেকশন। আর সেটা আসতে হবে পুরুষ শাসিত ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষ সংগঠকদের তরফ থেকে। ক্রীড়াঙ্গনে কর্তৃত্ববাদীতার অবসান তখনি সম্ভব যখন পুরুষ নারী ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিপক্ষে দাঁড়াবে। একজন নারী ক্রীড়াবিদ বলেছেন- ‘ক্রীড়াঙ্গনে কৃতকার্য হতে গেলে, জয় লাভ করতে গেলে, তিনটি প্রবল শক্তিকে নিজের আয়ত্তের মধ্যে আনতে হবে আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা।

যত সমস্যাই হোক থামলে কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। আর তাই বহু প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে লড়াই করতে হবে ক্রীড়াঙ্গনে। অথচ দেখুন ক্রীড়াঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণ এবং সাফল্য বেড়েই চলেছে। ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের সমস্যা সমস্যার স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, সমস্যা অস্বীকার করলে সমস্যার সমাধান আসবে না। আমাদের দুর্বলতা হলো অনেক ক্ষেত্রে অনেক ভালো নীতি নেই। যতটুকু আছে সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি গোষ্ঠী বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যখন তারা দেখে যে নীতি তাদের পক্ষে যাচ্ছে না, তখন তারা সেটি নাকচ করে কিংবা বাধাগ্রস্ত করে।

আমরা নারী ফুটবলে অগ্রগতি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। আমাদের বুঝতে হবে সচেতনতা এবং আর্থিক পরিকাঠামো যদি মজবুত না হয় তাহলে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা পায়ে বল নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে এশিয়ান চত্বরে দাপিয়ে বেড়াতে পারবেন না। নারী ফুটবল নিয়ে চিন্তাভাবনা শুধু মুখে মুখে থাকলে হবে না বাস্তবে সেটি বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নিতে হবে। গত মাসে বার্তা সংস্থা এএফপির একটি খবর চোখে পড়েছে। সেটি হলো এই প্রথমবারের মতো ‘ব্যালন ডি-অর’ ফুটবলারদের ব্যক্তিগত পুরস্কার ছেলে ও মেয়েদের বিভাগে পুরস্কার সংখ্যা হবে সমান। ১৯৫৬ সাল থেকে ব্যালন ডি-অর পুরস্কারের প্রচলন করা ফ্রান্সের সাময়িকী ফ্রান্স ও ফুটবল এবং উয়েফা জানিয়েছে মেয়েদের বিভাগে সেরা নারী গোলকিপার, সেরা উদীয়মান নারী খেলোয়াড় এবং ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোল করা নারী ফুটবলারের পুরস্কার এবার সংযোজন করা হয়েছে। অর্থাৎ ছেলে ও মেয়েদের বিভাগে সমান ছয়টি করে পুরস্কার দেওয়া হবে।

এর বাইরে রয়েছে সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড বিভিন্ন সামাজিক ও সংহতিপূর্ণ কাজের জন্য ২০২২ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়, যা ছেলে ও মেয়েদের বিভাগ থেকে যে কেউ জিততে পারেন। ২০২২ সালে পুরস্কারটি জেতেন সেনেগালের ফরোয়ার্ড সাদিও মানে, ২০২৩ সালে ব্রাজিল উইঙ্গার ভিনিসিউস জুনিয়র এবং গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছেন স্পেন নারী দলের তারকা হেনি রেহমোনে। ফুটবলে সমতার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। ফুটবলে বৈষম্যের অবসানের ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এদিকে আগামী আট বছরের জন্য ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিস্টি কভেন্ট্রি। ৪১ বছর বয়সী এই জিম্বাবুইয়ান সাঁতারু আইওসির ১৩১ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি এবং প্রথম আফ্রিকানও।

ইকরামউজ্জমান: কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সম্মানিত সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন ও প্যানেল রাইটার ফুটবল এশিয়া।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ