Views Bangladesh Logo

ফটিকছড়িতে বাবার সামনেই পিটিয়ে হত্যা করা হয় কিশোর মাহিনকে

ট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ১৫ বছর বয়সী স্কুলছাত্র মো. মাহিনকে চুরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার বাবার সামনেই মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের বাবা মো. লোকমান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার ছেলেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেছে মাহিন নাকি টাকা নিয়েছে। আমি বলেছি, যদি নিয়ে থাকে আমি টাকা ফেরত দেব। তবুও তারা ছাড়েনি। আমার ছেলেকে আমার সামনেই মেরে ফেলেছে। আমি প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।'

এ সময় আহাজারি করতে করতে মাহিনের ফুফু সুখী বেগমের বলেন, মাহিন মৃত্যুর আগে পানি পান করতে চাইলেও তাকে পানি দেওয়া হয়নি। নৃশংস এই ঘটনায় মাহিনের সাথে থাকা অন্য দুই কিশোরকেও মারধর করা হয় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা দাবি করেন, এদিন কোনো চুরির ঘটনাই ঘটেনি, আগের কিছু ঘটনার জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয় মাহিনকে। তারা জানান, মাহিন এবং তার বন্ধুরা এলাকায় বখে যাওয়া কিশোর হিসেবেই পরিচিত ছিল।

গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে মাহিন তার দুই বন্ধু রাহাত ও মানিকের সাথে চট্টগ্রাম শহর থেকে বাড়িতে ফিরছিল। রাত তিনটার দিকে ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের সাকর আলী তালুকদার বাড়ির চেইঙ্গার ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওতপেতে থাকা ৭-৮ জন ব্যক্তি তাদের ধাওয়া করে।

একপর্যায়ে চোর অপবাদ দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে তিন বন্ধু পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নেয়। আক্রমণকারীরা তাদের ধরে এনে চেইঙ্গার ব্রিজের রেলিঙের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাতভর নির্মমভাবে মারধর করে। একপর্যায়ে মাহিনের বাবা মুহাম্মদ লোকমান ছেলেকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে বাবার সামনেই মাহিন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

এদিকে যে বাড়িতে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই বাড়ির মালিক মোবারক নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন যে তাদের বাড়িতে কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, লোকজনের চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন যে স্থানীয় কয়েকজন ওই তিন কিশোরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

নিহত মাহিনের বাবা মো. লোকমান জানান, 'আক্রমণকারীরা মাহিনের বিরুদ্ধে টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগ তোলে। আমি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তারা মাহিনকে ছাড়েনি। বরং আমাকেও তারা নির্যাতন করে।'

কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল কাদের চৌধুরী এই হত্যাকাণ্ডকে বেআইনি ও অমানবিক বলে মন্তব্য করেন।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমদ বলেন, 'আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ছেলেটিকে চোর আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবার মামলা করার কথা জানিয়েছে।'

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই যুবক, মো. নোমান ও আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে এবং মূল হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আহত দুই কিশোর রাহাত ও মানিক এবং মাহিনের বাবা মুহাম্মদ লোকমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ