‘অন্যায় বরখাস্ত আদেশ’ প্রত্যাহার করা না হলে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের
‘অন্যায় বরখাস্ত আদেশ’ প্রত্যাহার করা না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। কারণ তাদের অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের কারণে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সমন্বয়ক মো. শওকত হোসেন মোল্যা এ কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডার এসোসিয়েশন ঢাকায় সমাবেশ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে আলটিমেটাম দেয় এবং সে সময়ে ও পরবর্তী তারা অন্য ক্যাডারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কটূক্তি করেন। এর পূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঘেরাও করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তার প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শুরু হয়।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের এই সমন্বয়ক বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়াধীন দপ্তর ও সংস্থায় কর্মরত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের জন্য ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকরিবিধির পরিপন্থি। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে বরখাস্ত করায় পরিষদ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এভাবে সাময়িক বরখাস্ত অব্যাহত থাকলে সিভিল সার্ভিসে চরম অসন্তোষ দেখা দেবে, যা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। এ অবস্থায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে জারি করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশগুলো প্রত্যাহার করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, প্রশাসন ক্যাডার থেকে এ অন্যায় আগ্রাসনের বিষয়ে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ ও সংশ্লিষ্ট ক্যাডার অ্যাসোসিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে এবং এই অন্যায় আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। উপদেষ্টারা আমাদের আশ্বস্ত করলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এখনো সাময়িক বরখাস্ত চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এবং অন্যায় বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদভুক্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।
শওকত হোসেন বলেন, সেবামূলক সিভিল সার্ভিস তৈরিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ কয়েকটি কমিশনের নিকট আমাদের সুস্পষ্ট দাবি-(ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার, ডিএস পুলে কোটা বাতিল, সব ক্যাডারের সমতা) উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপস্থাপিত রিপোর্টে ২৫ ক্যাডারের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা আগেই উল্লেখ করেছিলাম গঠিত পক্ষপাতমূলক জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। আমাদের আশঙ্কাই সঠিক হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অস্পষ্ট রিপোর্ট ও জনবিরোধী প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে কিছু প্রস্তাব সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া রিপোর্টের কিছু প্রস্তাব একে অপরের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেলে, খুঁটিনাটি যাচাই করে লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গণপূর্ত ক্যাডারের মো. জামিলুর রহমান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের ড. মুহাম্মদ আহসান হাবিব, কৃষি ক্যাডারের মো. মমিনুল হক, কৃষি ক্যাডারের ফাতেহা নূর।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে