Views Bangladesh Logo

আগামী নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে: জরিপ

আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের শারীরিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি আগের তুলনায় বাড়বে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

শনিবার ঢাকার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এক গোলটেবিল এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ‘ডিজিটালি রাইট’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জার্নালিস্ট সেফটি ইন ২০২৬ ইলেকশন’ শিরোনামের এ গবেষণায় ১৯টি জেলার ২০১ জন সাংবাদিকের ওপর জরিপ চালানো হয় এবং ১০টি ‘ইনডেপথ’ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

জরিপ পরিচালনাকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটালি রাইট’ বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের ৮৯ শতাংশের আশঙ্কা নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় তারা শারীরিক আক্রমণ বা মারধরের শিকার হতে পারেন। ৭৬ শতাংশ সাংবাদিক মৌখিক হয়রানি ও ৭১ শতাংশ ভীতি প্রদর্শনকে প্রধান ঝুঁকি বলে মনে করেন।

“নারী সাংবাদিকদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেশি প্রকট। নারী সাংবাদিকদের ৫০ শতাংশ যৌন হয়রানি ও ৪০ শতাংশ যৌন আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।”

নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় শারীরিক হুমকির পাশাপাশি ডিজিটাল হয়রানি বাড়ারও আশঙ্কা করছেন জরিপে অংশ নেয়া সাংবাদিকেরা।

৭৫ শতাংশ সাংবাদিক বলেছেন, তাদের বা তাদের সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপতথ‍্য বা ‘ডিসইনফরমেশন’ ছড়ানোর আশংকা বেশি। ৬৫ শতাংশের কাছে হ্যাকিং একটি বড় ঝুঁকি। নারী সাংবাদিকেরা অনলাইনে হয়রানি ও নজরদারি নিয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উত্তরদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করেন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে মানহানিকর প্রচারণাও চালানো হতে পারে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমেরই এই ঝুঁকি মোকাবেলার জন‍্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই।

জরিপের ফল বলছে, নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা কাঠামো প্রতিষ্ঠানে নেই। মাত্র ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ৭৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের সংবাদমাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা নীতিমালা নেই।

৯০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা বলেছেন, শারীরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও কর্মীরাই ঝুঁকির প্রধান উৎস। নারী ও আঞ্চলিক সাংবাদিকেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকেও বড় হুমকি হিসেবে দেখেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক লেবেলিং (পরিচয় কাজে লাগানো), গণমাধ্যমের ওপর আস্থার অভাব, উগ্রবাদ, গণপিটুনি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ছড়ানো অপতথ্য এবারের নির্বাচনে ঝুঁকি বাড়ার মূল কারণ।

নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। যেমন- দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, সংবাদমাধ্যমে সুস্পষ্ট নিরাপত্তা প্রোটোকল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, জেন্ডার-সংবেদনশীল সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং জরুরি ও আইনি সহায়তা পাওয়ার উন্নত সুযোগ।

আলোচনায় ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, টাইমস অব বাংলাদেশের সম্পাদক এম আবুল কালাম আজাদ, সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন, আরটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদুল কবির, নিউ এজের প্রধান প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ সংবাদদাতা শাহনাজ শারমিন, যমুনা টেলিভিশনের অ‍্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আঞ্জুমান নিকোল ও বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম গোল টেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ফোয়ো মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রকল্প সমন্বয়ক (এশিয়া) মারিয়া পিটারসন অনলাইনে গোলটেবিল আলোচনায় যুক্ত হন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ