পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্ট মার্টিন, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
দীর্ঘ নয় মাস বন্ধ থাকার পর আগামীকাল (১ নভেম্বর) থেকে আবারও পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্টমার্টিন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। তবে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণকারীদের কঠোরভাবে মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষায় নির্দেশনাগুলো কার্যকর করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের ১২ নির্দেশনা:
১. বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে যেতে পারবে না।
২. টিকিট কেবল বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে কিনতে হবে।
৩. প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কোডবিহীন টিকিট নকল গণ্য হবে।
৪. নভেম্বর মাসে কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণ করা যাবে; রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ।
৫. ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপন অনুমোদিত থাকবে, ফেব্রুয়ারিতে ভ্রমণ বন্ধ।
৬. প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন।
৭. রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ নিষিদ্ধ।
৮. কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি করা যাবে না।
৯. সামুদ্রিক কাছিম, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা নিষিদ্ধ।
১০. সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা যেকোনো মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ।
১১. পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
১২. পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানান, ‘সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে এবার থেকে কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাবে।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম জানান, ‘সেন্টমার্টিনে যেতে হলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।’
সরকার আশা করছে, নতুন এই নির্দেশনাগুলোর কঠোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং দ্বীপটি হয়ে উঠবে দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উদাহরণ।
প্রবালসমৃদ্ধ এই দ্বীপে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ ছিল। এবার নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসের জন্য ভ্রমণ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সেন্টমার্টিনে ১ হাজার ৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, অবকাঠামো নির্মাণ ও দূষণের কারণে দ্বীপের পরিবেশ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে গত নয় মাস পর্যটক না থাকায় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশে দৃশ্যমান উন্নতি ঘটেছে।
স্থানীয়দের মতে, অতীতে সৈকতে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচলের কারণে শামুক-ঝিনুকসহ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যেত। এখন সেসব প্রাণীর বংশবিস্তার বেড়েছে। একইসঙ্গে প্রবাল ও শৈবাল আহরণও বন্ধ রয়েছে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের চেয়ারম্যান এডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, 'পর্যটক সীমিত রাখার উদ্যোগে সেন্টমার্টিনের পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। সৈকতে এখন লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক বেড়েছে, এমনকি কাছিমের ডিম পাড়ার উপযুক্ত পরিবেশও ফিরেছে।'
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে