শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করেনি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করেনি বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সংস্থাটি বলছে, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।
সোমবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এমন একটি বিচার ব্যবস্থা প্রয়োজন, যা হবে একবারে ন্যায্য ও পক্ষপাতহীন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার যেন মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে না হয়। শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে জুলাই ভুক্তভোগীরা প্রকৃত বিচার পেয়েছে, এমনটা নয়। তারা আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। প্রকৃত ও অর্থপূর্ণ সত্য প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই বিচার ও দণ্ড স্বচ্ছ বা ন্যায়সংগত কোনোটাই হয়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে যারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী, তাদের অবশ্যই তদন্তের আওতায় আনতে হবে। মৃত্যুদণ্ড কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও জটিল করে তোলে। এটি চূড়ান্তভাবে নিষ্ঠুর, অবমাননাকর এবং অমানবিক শাস্তি। ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ডের কোনো স্থান হতে পারে না।
অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছে। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার এবং রায় ন্যায্য বিচারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ তৈরি করে। স্পষ্টতই শেখ হাসিনার আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতির জন্য সময় ছিল অপর্যাপ্ত।
মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না ওএইচসিএইচআর
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। সংস্থাটি বলেছে, তারা কোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। রায় ঘোষণার পর গতকাল জেনেভায় ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এ প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন, তা গত বছরের জুলাই আন্দোলনে দমনপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত। সব ধরনের জবাবদিহিমূলক কার্যক্রমে, বিশেষ করে এ ধরনের মানবতাবিরোধী অভিযোগের ব্যাপারে আমরা বরাবরই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কথা বলে এসেছি।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়কে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাভিনা বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলেছে এবং আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন।
এদিকে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, আশা করি বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পুনর্মিলন ও পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে অর্থবহ সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ: আইসিজি
রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানায়, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ। সংস্থাটির বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, এই রায়ের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য আসামিদের দায়বদ্ধতা নিয়ে জনসাধারণের মনে তেমন কোনো সন্দেহ নেই।
তবে বিচার প্রক্রিয়ার কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইসিজি। কিন বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার সাধারণত বিতর্কের সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত শুনানি পরিচালনায় বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সমালোচনাগুলো বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জকে প্রতিফলিত করে, যা অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও যথেষ্টভাবে মোকাবিলার জন্য কাজ করেনি।
এই রায়ের রাজনৈতিক তাৎপর্যকে ‘সুদূরপ্রসারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন থমাস কিন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। কিন্তু যতদিন তিনি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাবেন, ততদিন দলটির জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ফেরার পথ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে