Views Bangladesh Logo

আজ মহাষষ্ঠী, সারা দেশে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব

ছরজুড়ে অপেক্ষার পর আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন—শারদীয় দুর্গোৎসব। শাস্ত্রমতে, দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টির কল্যাণে আবারো ধরাধামে আগমন করেছেন দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনির মাঝে বেল গাছের নিচে পূজা অর্চনার মাধ্যমে কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। অধিবাসনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

দেবীর আগমনে রাজধানীর প্রতিটি মন্দির-মণ্ডপে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহামায়া দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমা রঙিন সাজে প্রস্তুত। প্রতিমাগুলোর রঙতুলি সম্পন্ন, ত্রিশূল, চক্র, ঢাল-তলোয়ারসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত দশভুজা দেবীর রূপে তাকিয়ে থাকছেন দর্শনার্থীরা। পুরো মন্দিরজুড়ে আলোকসজ্জা ও রঙিন কাঠামোর মনোমুগ্ধকর সজ্জা। নির্বিঘ্ন নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য; পূজা কমিটির পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ।

গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন, খামারবাড়ী কৃষি ইনস্টিটিউট, রামকৃষ্ণ মিশন, রমনা কালী মন্দির, শাঁখারীবাজার, মিরপুর, পশ্চিম ধানমণ্ডি, বনশ্রীসহ রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় চলছে একই আয়োজন। বনানী মাঠে বিশাল কাঠামো ও রঙিন আলোকসজ্জায় তৈরি হয়েছে জমকালো পূজাঙ্গন। পাঁচ দিনই থাকবে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ নানা বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামীকাল মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা স্থাপন ও সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে দেবীর মৃণ্ময়ীতে প্রাণ সঞ্চার করা হবে। মঙ্গলবার মহাঅষ্টমীতে নতুন পোশাকে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকল ভক্ত দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করবেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা ও কুমারী পূজা—যেখানে কুমারী কন্যাকে দেবীর ‘উমা’ রূপে পূজা করা হবে। বুধবার নবমী পূজার পর ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানানো হবে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী জানান, শাস্ত্রমতে দেবী সপ্তমীতে আগমন এবং দশমীতে গমন করেন। এবার দেবীর আগমন গজে (হাতি), যা শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক; তবে প্রস্থান দোলায় (পালকি), যা মহামারি বা বিপদের ইঙ্গিত বহন করে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে—গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৮৯৪টি বেশি। ঢাকা মহানগরে পূজা হচ্ছে ২৫৯টি মণ্ডপে, যা গতবারের চেয়ে ৭টি বেশি। নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে ২২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে।

হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও জানান, সরকার থেকে এ বছর পূজার জন্য ৫ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ