Views Bangladesh Logo

‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ রয়েছে’

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করলে এ সম্পর্ক বহুগুণে বিস্তৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার প্রফেসর অনিল সুকলাল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় দূতাবাস না থাকাকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখলেও বিষয়টির নিরসনে কিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।

হাইকমিশনার সুকলাল বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক এখনো তার পূর্ণ সম্ভাবনার স্তরে পৌঁছেনি, বিশেষ করে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে। এই সম্পর্কের মধ্যে যে সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত বাণিজ্যে, তা আমরা এখনো কাজে লাগাতে পারিনি। কিন্তু এর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে এবং উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করলে এ সম্পর্ক বহুগুণে বিস্তৃত হতে পারে’।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রফেসর সুকলাল বলেন, ‘আমার মনে হয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় দিকেই দৃশ্যমানতার ঘাটতি রয়েছে। আমরা জানি না, একে অন্যের বাজারে কী অফার রয়েছে। এই অজ্ঞতা থেকেই ব্যবসাগুলো পিছিয়ে পড়ে’।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং ওষুধ শিল্পে সহযোগিতা বাড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকার গভীর আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘সরকার শুধু সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক সম্পর্কের মূল চালক হওয়া উচিত বেসরকারি খাত। এই পরিবেশ আমরা তৈরি করেছি, যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভিসা ইস্যু, যা আমরা সহজ করতে কাজ করছি’।

ভিসা আবেদন গ্রহণে দিল্লি ও দাকার ভিএফএস-এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তির পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন হাইকমিশনার। এতে আবেদন সংগ্রহ করে দিল্লিতে পাঠিয়ে তা প্রক্রিয়াজাত সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে কিছু অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি। এ বছর শেষ হওয়ার আগেই ফরেন অফিস কনসালটেশন হওয়া জরুরি। এটাই সম্পর্ক পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক’।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ তিন দশকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রফেসর সুকলাল বলেন, ‘আশা করছি, অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে পরবর্তী এফওসি হবে। তখন যদি বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়, তাহলে ছোট ট্রেড ডেলিগেশনও যেতে পারে। এতে চেম্বার পর্যায়ের সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে’।

তিনি জানান, সমঝোতা স্মারকের খসড়া প্রস্তুত রয়েছে এবং এটি বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। দুই দেশের ব্যবসায়িক চেম্বারগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্নে হাইকমিশনার বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় মাঝে মাঝে বিদেশি সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এটি একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাজ, যা সরকার অত্যন্ত কার্যকরভাবে দমন করে থাকে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকার সচেতন এবং এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু আপনাদের দূতাবাসকেও আরও সক্রিয়ভাবে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে হবে’।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় জনগোষ্ঠী এবং এটিই আমাদের সম্পর্ক বাড়ানোর বড় সুযোগ’।

বাংলাদেশের কৃষিখাতের দক্ষতা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তৃত জমির সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে প্রফেসর অনিল সুকলাল বলেন, ‘কৃষি আমাদের জিডিপির মাত্র দুই শতাংশের সামান্য বেশি অবদান রাখে। আপনারা এই খাতে অত্যন্ত দক্ষ। আর আমাদের আছে জমি। আমি মনে করি, এই জায়গায় যৌথ বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে’।

এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার খনিজ ও খনিশিল্পে দক্ষতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই খাতেও দুই দেশ পারস্পরিকভাবে কাজ করতে পারে।

দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, গবেষক, সাংবাদিক ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের মধ্যে বিনিময় ও যোগাযোগ আরও বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রফেসর সুকলাল। বলেন, ‘এই সম্পর্ককে দৃশ্যমান ও টেকসই করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’।

তিনি জানান, বাংলাদেশ ১৯৯৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রিটোরিয়ায় হাইকমিশন চালু করে। উভয় দেশ কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য হওয়ায় কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।

হাইকমিশনার বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যে অভিন্ন মূল্যবোধ আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তুলেছে, তা মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শে অনুপ্রাণিত’।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ